স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় মোহনপুরের ওসি বরখাস্ত

রাজশাহীর স্কুলছাত্রী সুমাইয়া আকতার বর্ষার (১৪) আত্মহত্যার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে গতকাল মঙ্গলবার সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হোসেন। এর একদিন আগে তাঁকে মোহনপুর থানা থেকে সরিয়ে রাজশাহী পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছিল।
রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) ইফতে খায়ের আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, স্কুলছাত্রী বর্ষার আত্মহত্যার ঘটনায় পুলিশের অবহেলা আছে কি না, তা জানতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। মঙ্গলবার কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ ওসি আবুল হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। একই সঙ্গে তাঁকে বরিশাল রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়েছে।
গত ২৩ এপ্রিল প্রাইভেট পড়তে গিয়ে অপহরণের শিকার হয় নবম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া আকতার বর্ষা। ওই দিন বাড়ি থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে খানপুর বাগবাজার এলাকায় অচেতন অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়। এ ঘটনায় রাতেই প্রতিবেশী মুকুলকে পুলিশ আটক করলেও পরদিন সকালে তাকে ছেড়ে দেয়। এরপর টানা চার দিন বর্ষার পরিবার মামলা করতে থানায় গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। উল্টো বর্ষার বাবাকে আটকে রেখে হয়রানি এবং পিটিয়ে দাঁত ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেন ওসি আবুল হোসেন। ক্ষোভে গত ১৬ মে নিজ ঘরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে বর্ষা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিবেশী মুকুল হোসেনের প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল নবম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া আকতার। এরপর বান্ধবীর সহায়তায় তাকে অপহরণ করে মুকুল। পরে স্থানীয় লোকজন অচেতন অবস্থায় সুমাইয়াকে পড়ে থাকতে দেখে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। প্রথমদিকে পুলিশ মামলা না নিলেও পরে ঘটনা ব্যাপক জানাজানি হলে পুলিশ মামলা গ্রহণ করে মুকুলের তিন স্বজনকে গ্রেপ্তার করে। তবে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা স্কুলছাত্রীর বাড়ি থেকে পরে যাওয়া পায়জামাটি পাওয়া না গেলেও মামলার অভিযোগে এ কথা উল্লেখ করা হয়নি। অভিযোগে আরো নেই ধর্ষণের বিষয়টি।
এদিকে, মামলার পর আসামির পরিবারের সদস্যরা এলাকায় সুমাইয়ার বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করে। এসব অপমান সহ্য করতে না পেরে মা-বাবাকে চিঠি লিখে গত ১৬ মে বৃহস্পতিবার বিকেলে আত্মহত্যা করে সুমাইয়া।
মা-বাবাকে লেখা চিঠিতে সুমাইয়া লিখেছে, ‘নিজের লজ্জার কথা বারবার সবাইকে বলতে বলতে আমি নিজের কাছে অনেক ছোট হয়ে গেছি। প্রতিদিন পরপুরুষের কাছে এসব বলতে বলতে আমি আর পারছি না। অপরাধীকে শাস্তি দিলেই তো আর নিজের মানসম্মান ফেরত পাব না। তাই আমাকে ক্ষমা করো।’ বৃহস্পতিবার বিকেলে শোবার ঘর থেকে সুমাইয়া আকতারের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সুমাইয়ার বাবা আবদুল মান্নান অভিযোগ করে বলেন, ‘বাইরে বের হলেই আমার মেয়েকে বাজে কথা শুনতে হতো। আমাদেরও বাজে কথা শুনতে হতো। মেয়ে বলত—বাবা, আমার জন্য তোমাদের বাজে কথা শুনতে হচ্ছে। আমার কারণে নাকি আমার বোনদের বিয়ে হবে না।’
মোহনপুর থানার পুলিশ মুকুল হোসেনের নানি সকিনা বেগম, খালাতো ভাই রাব্বি ও খালু রাসেলকে গ্রেপ্তার করেছে। পরে আদালতের মাধ্যমে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়।