প্রিপেইড মিটারে দুর্নীতি বন্ধের দাবিতে খুলনায় ৭ দিনের কর্মসূচি

বিদ্যুৎখাতের সরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) প্রিপেইড মিটারে ব্যাপক দুর্নীতি করছে অভিযোগ করে এর প্রতিবাদে সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে খুলনার ‘প্রিপেইড মিটারে বিদ্যমান দুর্নীতি প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটি’।
শনিবার দুপুরে খুলনা বিএমএ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন কমিটির আহ্বায়ক ও খুলনা বিএমএর সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম।
ডা. শেখ বাহারুল আলম বলেন, ‘সেবার নামে জনগণকে প্রতিনিয়ত হয়রানি করা হচ্ছে। দুর্নীতির প্রতিবাদে আগামী সোমবার পিকচার প্যালেস মোড়ে মানববন্ধন করা হবে। এছাড়া ১৯ জুন খুলনা সিটি মেয়র ও সংসদ সদস্য বরাবরে স্মারকলিপি ও ২০ জুন জেলা প্রশাসক এবং বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি দেওয়া হবে।’
লিখিত বক্তব্যে সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক এই খাতের ১২টি সুনিদিষ্ট দুর্নীতির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রিপেইডে ব্যবহারের আগেই বিল পরিশোধের কারণে ১ শতাংশ রিবেট বা ছাড় পাওয়ার কথা থাকলেও তা কখনোই দেওয়া হয় না। প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করার সঙ্গে সঙ্গে রিচার্জের টাকা ও বিভিন্ন খাতে কেটে নেওয়া টাকার মধ্যেও ব্যাপক গরমিল রয়েছে। ওজোপাডিকোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এতটাই বেপরোয়া যে, গ্রাহকরা এ বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা চাইলে তারা উত্তেজিত হয় এবং অনীহা প্রকাশ করে।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘গ্রাহকরা সন্দেহ প্রকাশ করে যে ওজোপাডিকোর ব্যবহৃত সফটওয়্যার এমনভাবে তৈরি যা গ্রাহকের রিচার্জের টাকা সমন্বয়ের ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে ত্রুটিযুক্ত ও দুর্নীতিগ্রস্ত। মিটার লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রথম রিচার্জে সঠিক বিল এলেও পরবর্তী মাস থেকে শুরু হয় অধিক বিলের ভোগান্তি, এই সবই সফটওয়্যারের কারসাজি। প্রত্যেক গ্রাহকের বিল থেকে ভ্যাট কেটে নেওয়া হচ্ছে ৫ শতাংশ, কিন্তু গ্রাহকদের কোনো কর চালানপত্র দেওয়া হয় না।’
ডা. শেখ বাহারুল আলম বলেন, ‘প্রিপেইড মিটারে গ্রাহকদের প্রতি সবচেয়ে নিষ্ঠুর আচরণ হলো মিটার লকিং ও লক ওপেনিং পদ্ধতি। প্রিপেইড মিটার লক হয়ে গেলে তা খুলতে বন্ধ ছাড়া কর্মদিবসে ওজোপাডিকোর দ্বারস্থ হতে হয় এবং সঙ্গে গুনতে হয় অর্থদণ্ডও, সেটাও নেহায়েত কম নয়। প্রতিবারে ১ হাজার ২০০ টাকার মাশুল গুনে খুলতে হয় লক। ছুটির দিন লক হলে ওজোপাডিকোর কর্মদিবসের অপেক্ষায় বিদুৎবিহীন থাকতে হয়।’
গ্রাহক হয়রানির আরেক সংযোজন হলো নো-ট্রেজ বিল। পিডিবি আমলের এবং পরবর্তী বিভিন্ন সময়ের পরিশোধিত বিলের স্লিপ না দেখাতে পারলে গ্রাহক ভৌতিক বিল পরিশোধে বাধ্য হন। নতুন মিটার স্থাপনের ডিমান্ড নোটে সংযোগের বিবিধ উপকরণ ব্যয় ৫ হাজার ৯৮০ টাকা এবং ১৫ শতাংশ ভ্যাট ৮৯৭ টাকা সংযোজন করা হয়েছে। কোনো উপকরণ সরবরাহ না করে ডিমান্ড নোটের শেষাংশে শুধু ৫ হাজার ৯৮০ টাকা বিয়োজন করা হয় কিন্তু ভ্যাটের সংযোজন অব্যাহত থাকে। অন্য একটা অংশে মোট মালামালের ১০ শতাংশ স্টোর চার্জ মূল্যে ৬৩৩ টাকা যা ভ্যাটসহ ৭২৭.৯৫ টাকা। যেখানে কোনো সরঞ্জামই প্রদান করা হলো না সেখান আবার স্টোর চার্জ কী বলে প্রশ্ন তুলেন ডা. শেখ বাহারুল আলম।
‘প্রিপেইড মিটার অধ্যায়ের প্রায় দুই বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে চাপানো হচ্ছে ডিজিটাল মিটার, যা স্বল্প সময়ের ব্যবধানে রূপান্তরিত হবে প্রিপেইড মিটারে। তাহলে এই ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকার ডিজিটাল মিটার বিক্রি হচ্ছে কার স্বার্থে?
প্রিপেইড মিটার ছাড়াও ওজোপাডিকোর ভেতরে রয়েছে অসংখ্য অনিয়ম দুর্নীতি ও গ্রাহক হয়রানির চিত্র। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিধি ভঙ্গ করে অধিকাংশ সময় কর্মস্থলের বাইরে (ঢাকায়) অবস্থান করেন। প্রতিষ্ঠানের টাকায় কর্মকর্তাদের কারণে-অকারণে বিদেশ গমণের ফলে রাষ্ট্রের বিপুল অঙ্কের অর্থ অপচয় হচ্ছে।’
ডা. শেখ বাহারুল আলম বলেন, এরপরে ওজোপাডিকোর প্রিপেইড মিটারে দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রত্যেক ওয়ার্ডে সামাজিক, রাজনৈতিক, পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে মতবিনিময় সভা করে কঠিন আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ, জাসদ, ওয়াকার্স পার্টির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।