সাবাস বাংলাদেশে ‘সাবাস’ কাজ

সকাল সাড়ে ৭টা। বালতি, মগ ও ঝাড়ু নিয়ে সবাই হাজির। তারপর শুরু হয়ে যায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ। কেউ বালতিতে করে পানি আনছেন। আবার কেউ ঝাড়ু দিচ্ছেন বেদি। পরিষ্কারের কাজ চলে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত।
এভাবে পুরো দুই ঘণ্টা ১২ জন শিক্ষার্থী ধুয়েমুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেন প্রাণের ভাস্কর্য ‘সাবাস বাংলাদেশ’কে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ভাস্কর্য ‘সাবাস বাংলাদেশ’কে এভাবে ধুয়েমুছে সাবাসের কাজটি করলেন একদল শিক্ষার্থী।
আজ শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের ১২ জন শিক্ষার্থী এই অভিনব কাজ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। এতে প্রশংসায় পঞ্চমুখ ক্যাম্পাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
ভাস্কর্য পরিষ্কারের কারণ জানতে চাইলে হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ১৯তম ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁরা কয়েকজন বন্ধু সাবাস বাংলাদেশে ঘুরতে এসেছিলেন। এসে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে জুতা পায়ে সাবাস বাংলাদেশের মূল বেদিতে উঠতে দেখেন। জুতা পায়ে উঠতে দেখে তাঁদের খারাপ লাগে। বারণ করলেও তাঁরা বলেন, ‘সাবাস বাংলাদেশ’ যে নোংরা হয়ে আছে তাতে জুতা পায়ে না উঠে উপায় নেই।
এই ঘটনার পর সাবাস বাংলাদেশের বেদি পরিষ্কার করতে নিজেরাই বালতি, মগ ও ঝাড়ু তুলে আজ পরিষ্কারের কাজ করেন।
এ বিষয়ে তাঁদেরই একজন তাহিদুল ইসলাম সুমন বলেন, ‘এ ঘটনার পর আমরা সিদ্ধান্ত নিই নিজেরাই সাবাস বাংলাদেশকে পরিষ্কার রাখব। তাই বন্ধুরা মিলে পরের দিন (আজ) সকালেই পরিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নিই। সকাল সাড়ে ৭টায় মেস থেকে বালতি, মগ ও ঝাড়ু নিয়ে আসি। এরপর সিনেট ভবনের পাশ থেকে পানি এনে আনন্দের সঙ্গেই ভাস্কর্যের বেদিসহ আশপাশ পরিষ্কার করেছি। সাড়ে ৯টার দিকে একদম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে তবেই আমরা ক্ষান্ত হই।’
ওই বিভাগের ১২ জন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মার্কেটিং বিভাগের রাহাত নামের এক শিক্ষার্থীও এই কাজে অংশ নেন। ক্যাম্পাসের জন্য এমন কিছু করতে পেরে নিজেদের ভালো লাগার কথাও জানান তিনি। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আগ্রহী অন্যান্য শিক্ষার্থীদের নিয়ে পর্যায়ক্রমে গোটা ক্যাম্পাস পরিষ্কার করবেন বলে স্বপ্ন দেখেন।
এমন কাজের প্রশংসা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা সাদেকুল আরেফিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের এই কাজটি খুবই প্রশংসনীয়, যা অন্য শিক্ষার্থীদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক হয়ে ধরা দেবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী যদি এভাবে এগিয়ে আসে, তাহলে আমাদের এই ক্যাম্পাস দ্রুতই দেশের সেরা ক্যাম্পাসে পরিণত হবে। শিক্ষার্থীদের সাবাস বাংলাদেশ পরিষ্কারের এই কাজ আমাদের সবার কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’