তিন ছাত্রী অপহৃত, মাইক্রোবাস থেকে লাফিয়ে বাঁচলো একজন

গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে স্কুল যাওয়ার পথে অপহরণ করা হয়েছিল মাওনা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর তিন ছাত্রীকে। গতকাল বুধবার সকাল ৯টার দিকে শ্রীপুর উপজেলার শান্তিনগর এলাকা থেকে একটি মাইক্রোবাসে করে তাদের অপহরণ করা হয়। রাত ৮টার দিকে মাইক্রোবাসটি রাজশাহী নগরীর তালাইমারী এলাকায় পৌঁছালে অপহৃত তিন ছাত্রীর মধ্যে একজন মিতা আক্তার বর্ষা (১৪) মাইক্রোবাস থেকে লাফ দেয়। এ সময় পাশের ওষুধের দোকানদার হাসিবুর রহমান চৌধুরী তাকে উদ্ধার করে মতিহার থানায় নিয়ে যায়।
মিতা আক্তার বর্ষা শ্রীপুরের শান্তিনগর এলাকার মতিউর রহমানের মেয়ে। তার সঙ্গে অপহরণ হওয়া অপর দুই শিক্ষার্থীর নাম জ্যোতি ও মেঘলা। তারাও বর্ষার সঙ্গেই পড়ে। তবে তাদের পরিবারের পুরো পরিচয় সে তাৎক্ষণিকভাবে বলতে পারেনি।
নগরীর বিনোদপুর এলাকার বাসিন্দা হাসিবুর রহমান চৌধুরী (৬৫) তালাইমারী মোড়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করেছেন। তিনি বলেন, তালাইমারী মোড়ে তাঁর একটি ওষুধের দোকান রয়েছে। দোকানের সামনে একটি চেয়ার পাতা থাকে। রাত ৮টার দিকে হঠাৎ স্কুলের ইউনিফরম পরা একটি মেয়ে দৌড়ে এসে ওই চেয়ারে বসে কান্নাকাটি শুরু করে। তিনি তার কাছ থেকেই অপহরণের ঘটনাটি জানতে পারেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি মতিহার থানার ওসিকে বিষয়টি অবহিত করেন। ওসি থানা থেকে লোক পাঠাতে চান। কিন্তু পুলিশের দেরি হচ্ছিল দেখে তিনি নিজেই থানায় গিয়ে মেয়েটিকে দিয়ে আসেন।
মিতা আক্তার বর্ষা পুলিশকে জানায়, সকাল ৯টার দিকে তারা বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ে যাচ্ছিল। পথের মধ্যে একটি সাদা রঙের বড় মাইক্রোবাস গতিরোধ করে তাদের মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। এরপর তার আর জ্ঞান ছিল না। জ্ঞান ফেরার পরে গাড়িটি এক জায়গায় দাঁড়ালে সে দরজা খুলে লাফ দিয়ে নেমে দৌড় দেয়। পরে সে জানতে পারে সে রাজশাহীতে। লাফ দেওয়ার সময় তার দুই সহপাঠী অচেতন অবস্থায় ছিল। তাদের পরনেও স্কুল ড্রেস রয়েছে বলে জানায় বর্ষা।
মতিহার থানার পুলিশ রাত সাড়ে ৯টার দিকে মুঠোফোনে বর্ষাকে তার মা নাজমা বেগমের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয়। পরে মুঠোফোনে নাজমা বেগম বলেন, তিনি একটি গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি করেন। সকাল ৮টায় তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছেন। সন্ধ্যা ছয়টায় তাকে বাড়ি থেকে ফোন করে জানানো হয় যে, মেয়ে বাড়ি ফিরে যায়নি। এরপর রাজশাহীর মতিহার থানার একজন এসআই মেয়ের সঙ্গে তাঁর কথা বলিয়ে দেন।
নাজমা বেগম বলেন, তাঁর স্বামীর বড় ভাই তৌহিদুল ইসলামসহ তিনজন রাতেই মেয়েকে আনতে রাজশাহীতে রওনা দিয়েছেন। তিনি মেয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চান। একইসঙ্গে অপহৃত অন্য দুই স্কুলছাত্রীকে যেন দ্রুত উদ্ধার করা হয় সেজন্য পুলিশের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি।
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) শাহাদত হোসেন খান বলেন, মাইক্রোবাসটির সন্ধানে পুলিশ তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে। রাজশাহীর প্রতিটি চেকপোস্টে সাদা রঙের মাইক্রোবাসকে থামাতে বলা হয়েছে। পাশের জেলাগুলোতেও খবর পাঠানো হয়েছে। তবে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত তাঁরা গাড়িটির কোনো খোঁজ পাননি।