খুলনায় ওসিসহ ৫ রেলপুলিশের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের অভিযোগ

খুলনা রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওসমান গনি পাঠানসহ পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে এক গৃহবধূকে (২১) নগ্ন করে বেঁধে রাখা ও ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। তবে পুলিশের দাবি, ওই গৃহবধূকে ফেনসিডিলসহ আটক করা হয়েছে। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন।
ওই গৃহবধূ আদালতে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের অভিযোগ করেছেন। আদালতের নির্দেশে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য গতকাল রোববার রাতে ওই গৃহবধূকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে পরীক্ষা না হওয়ায় আজ সোমবার তাঁর পরীক্ষা সম্পন্ন হয়।
ওসি ছাড়া বাকি চার পুলিশ সদস্যের নাম জানাতে পারেনি ভুক্তভোগীর পরিবার। অন্যদিকে রেলওয়ে পুলিশের তিন কর্মকর্তাকে রেখে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ওসি ওসমান গনি দেড় লাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন বলে ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু সমঝোতায় রাজি না হওয়ায় তিনি হুমকি দিচ্ছেন বলেও ওই গৃহবধূর পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন।
ভুক্তভোগীর বড় বোন জানান, তাঁর বোনের শ্বশুরবাড়ি সিলেটে। বাবার বাড়ি খুলনায়। তাঁদের মা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকায় তাঁকে দেখতে খুলনায় এসেছেন তাঁর বোন। তিনি নিজেও অসুস্থ থাকায় বৃহস্পতিবার যশোরে চিকিৎসক দেখাতে গিয়েছিলেন। শুক্রবার সেখান থেকে আসার সময় ফুলতলা এলাকায় জিআরপি পুলিশ প্রথমে তাঁকে মোবাইল চুরির অভিযোগে ধরে থানায় নিয়ে যান। পরে গভীর রাতে ওসি ওসমান গনি পাঠান তাঁকে ধর্ষণ করেন। এরপর আরো চার পুলিশ সদস্য ধর্ষণ করেন। তার আগে তাঁর বোনকে নগ্ন করে থানায় জানালার সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছিল। ওই সময় তাঁর মুখে গামছা দিয়ে বেঁধে রাখা হয় বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
পরের দিন শনিবার পাঁচ বোতল ফেনসিডিলসহ ওই নারীকে মামলা দিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
আদালতে গিয়ে বিচারকের সামনে তাঁর বোন জিআরপি থানায় তাঁকে গণধর্ষণের বিষয়টি তুলে ধরেন। এরপর আদালতের বিচারিক হাকিম তাঁর ডাক্তারি পরীক্ষার নির্দেশ দেন।
আজ সোমবার সকালে অভিযোগের বিষয়ে ওসি ওসমান গনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নয়। ফেনসিডিলের মামলা থেকে বাঁচতে ওই নারী এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। তাঁকে মহিলা উপপরিদর্শক (এসআই) ও মহিলা কনস্টেবল পাঁচ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করে। থানায় রাতে আটজন পাহারায় থাকেন। সেখানে তাঁকে কীভাবে ধর্ষণ করা হয়েছে?’
ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে রেলওয়ে খুলনা সার্কেলের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, কুষ্টিয়া রেলওয়ে সার্কেলের পুলিশ সুপার ফিরোজ আহমেদকে সভাপতি করে দর্শনা-৩ রেলওয়ে ইমিগ্রেশন ক্যাম্পের ডিআইও শ ম কামাল হোসাইন ও একই ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. বাহারুল ইসলামকে সদস্য করে তিন সদস্যের এই কমিটি করা হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে তাঁদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে জিআরপি থানায় গৃহবধূকে গণধর্ষণের প্রতিবাদে ও দোষী পুলিশ সদস্যদের শাস্তির দাবিতে জনউদ্যোগ নামের একটি সামাজিক সংগঠন কাল মঙ্গলবার সকালে শহরের পিকচার প্যালেস মোড়ে মানববন্ধন করার ঘোষণা দিয়েছে।