বৌভাতের আগের রাতে ‘অন্তঃসত্ত্বা প্রেমিকা’ হাজির, শ্রীঘরে প্রেমিক

খুলনার খালিশপুর এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে গত বুধবার শিঞ্জন রায় নামের এক যুবকের জাঁকজমকপূর্ণ বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। আজ শুক্রবার একটি অভিজাত হোটেলে তাঁর অনুপস্থিতিতে বৌভাত অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে বিয়ের খবর শুনে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতেই শিঞ্জনের বাড়িতে হাজির হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী (২০)। তাঁর দাবি, শিঞ্জনের কারণে তিনি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এ সময় শিঞ্জন রায়ের বাড়ির সামনে দুজনের বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ দুজনকে সোনাডাঙ্গা থানায় নিয়ে যায়।
এ সময় ওই ছাত্রী থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। পরে অভিযোগটি মামলা হিসেবে নেয় সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ। ওই মামলায় সদ্য বিয়ে করা শিঞ্জন রায়কে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। শিঞ্জন রায় খুলনার কর কমিশনার প্রশান্ত কুমার রায়ের ছেলে।
সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক জানান, শিঞ্জন রায় ও ওই তরুণী খুলনার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি বিভাগের তৃতীয় বর্ষে একসঙ্গে পড়াশুনা করেন। তরুণীর বাড়ি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলায়। তিনি সোনাডাঙ্গা থানার পেছনে ভাড়া বাসায় থেকে পড়াশুনা করেন। দুই বছর ধরে শিঞ্জনের সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক চলছিল।
ওসি আরো জানান, বিয়ের খবর শুনে ওই তরুণী গতকাল রাত ১০টার দিকে মুজগুন্নী আবাসিক এলাকায় শিঞ্জন রায়ের বাড়িতে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান এবং বিয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেন। এ সময় শিঞ্জন রায়ের সঙ্গে ওই তরুণীর বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে শিঞ্জন রায় ওই তরুণীকে জোর করে একটি ইজিবাইকে তুলতে গেলে স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দেন।
পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দুজনকেই সোনাডাঙ্গা থানায় নিয়ে যায়। এ সময় ওই তরুণী শিঞ্জন রায়ের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন যে শিঞ্জন রায়ের সঙ্গে তাঁর দুই বছরের প্রেম চলছে এবং তাঁকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। তিনি এখন ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা বলেও দাবি করেন। পরে সোনাডাঙ্গা থানায় শিঞ্জন রায়কে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে ওই তরুণীকে পুলিশি হেফাজতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়।
এদিকে ছেলেকে গ্রেপ্তারের পর খুলনার কর কমিশনার প্রশান্ত কুমার রায় বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ও শুক্রবার একাধিকবার সোনাডাঙ্গা থানায় ও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে মামলাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেন। এ কারণে শিঞ্জনকে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে গ্রেপ্তার দেখানো হলেও শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত শিঞ্জন রায়কে থানা থেকে বের করা হয়নি। সর্বশেষ বিকেল ৪টার পর শিঞ্জনকে আদালতে পাঠানো হয়।
এ ব্যাপারে খুলনার কর কমিশনার প্রশান্ত কুমার রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি স্বীকার করেন, ১৪ আগস্ট নগরীর খালিশপুরের অভিজাত কমিউনিটি সেন্টার তাঁর ছেলে শিঞ্জন রায়ের সঙ্গে অন্য এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। শুক্রবার খুলনার একটি অভিজাত হোটেলে ছেলের অনুপস্থিতিতে বৌভাত অনুষ্ঠিত হয়। তিনি নিজে গতকাল মধ্যরাতে থানায় গিয়ে ছেলেকে ছাড়ানোর তদবির করেছিলেন। কিন্তু পুলিশ ছাড়েনি। তিনি ছেলের এই প্রেমের কথা আগে জানতেন না বলে দাবি করেছেন। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।