মুখোশধারী ছাত্রলীগকর্মীরা পেটাল নেতাকে

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের সাবেক শিক্ষা ও পাঠ্যক্রমবিষয়ক সম্পাদকসহ চারজনকে গভীর রাতে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখোশধারী ছাত্রলীগকর্মীরা। গতকাল বুধবার রাত আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ হলে এ ঘটনা ঘটে।
হামলায় আহতরা হলেন বিগত কমিটির (আহমেদ-বিপু) শিক্ষা ও পাঠচক্রবিষয়ক সম্পাদক নূর জাহিদ সরকার নিয়ন, লোক প্রশাসন বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষার্থী নূর কুতুবুল আলম সবুজ, দর্শন বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান আম্মান এবং ইতিহাস বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষার্থী নিশান চৌধুরী। এঁরা সবাই নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের লতিফ হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি প্রার্থী শামীমের অনুসারী।
এ ঘটনার পর আজ বৃহস্পতিবার সকালে হামলাকারীরা হলের কক্ষ থেকে ল্যাপটপ, গিটার, সনদসহ প্রায় দেড় লাখ টাকা মূল্যের জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন হামলায় আহত মোস্তাফিজুর রহমান আম্মান । তিনি ওই কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী।
মোস্তাফিজুর রহমান আম্মান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ছাত্রলীগের সাবেক শিক্ষাও পাঠ্যক্রমবিষয়ক সম্পাদক জাহিদ নিয়ন রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) নিয়োগ পরীক্ষা দিতে আসেন। তারপর থেকে তিনি আমার রুমে থাকছেন।
‘গতকাল বুধবার রাতে লতিফ হলের ৩০১ নম্বর কক্ষে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা লিয়ন, ছাত্রলীগকর্মী সবুজ, নিশানসহ কয়েকজন। সেখানে আমিও ছিলাম। এ সময় এই হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর ইসলামের অনুসারী ভাষা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নিরব, তৃতীয় বর্ষের নাজমুল, ফাইন্যান্সের ব্যাংকিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সমীরণ কুমার মণ্ডল, নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সংগীত, সানোয়ারসহ প্রায় ১৫ জন কর্মী রুমে এসে নিয়নকে মারধর করে। তারা সবাই মুখে গামছা ও রুমাল বেঁধে আসে। কিন্তু তারা তো সবাই আমাদের পরিচিত, ফলে কথাবার্তায় তাদের চেনা যাচ্ছিল।’
মোস্তাফিজুর রহমান আম্মান আরো জানান, মুখোশধারীরা লোহার রড, হাতুড়িসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ৩০১ নম্বর কক্ষে থাকা সবাইকে বেদম পেটাতে থাকে। ঘটনাস্থল থেকে তিনি ও নিয়ন পালিয়ে নিচ তলায় হলের পুলিশ কক্ষে গিয়ে আশ্রয় নেন। ছাত্রলীগের মুখোশধারীরা সবুজ ও নিশানকে লোহার রোড-হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি শরীরের বিভিন্ন স্থানে পেটাতে থাকে।
‘একপর্যায়ে সবুজকে মারতে মারতে তিন তলা থেকে দুই তলায় নিয়ে আসার সময় বারান্দায় লুটিয়ে পড়েন। এ সময় সেখানে হলের পুলিশ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা এলে মুখোশধারীরা চলে যায়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে পুলিশ আহতদের উদ্ধার বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে পাঠায়।’
আহত আম্মান আরো জানান, পরে কক্ষ বন্ধ করে রাতে নিয়নকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সকালে রুমে এসে তিনি দেখতে পান, হামলাকারীরা তাঁর কক্ষ থেকে দুটি গিটার, একটি ল্যাপটপ ও শিক্ষাসনদসহ কিছু মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে নিয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে নবাব আব্দুল লতিফ হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মিজানুর ইসলাম বলেন, ‘ওই রুমে নাশকতার একটি পরকিল্পনা করা হচ্ছিল। পরে ছাত্রলীগকর্মীরা সেটা জানতে পারলে ওদের বাধা দেয়।’
নবাব আব্দুল লতিফ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক বিপুল কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। পরবর্তী সময়ে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’