বন্ধ ফেসবুকে বন্ধের সমালোচনা!

‘জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে’ অনির্দিষ্টকালের জন্য বাংলাদেশে ফেসবুক বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে বন্ধ রাখা হয়েছে ভাইবার, হোয়াটস অ্যাপসহ সামাজিক যোগাযোগের ৯-১০টি মাধ্যম। তবে বন্ধ ফেসবুক ব্যবহার করেই গত কয়েকদিন ধরে চলছে সরকারি সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা!
দেশে সোজাপথে ফেসবুক ব্যবহার বন্ধ করে দিলেও বিভিন্ন বিকল্প উপায়ে ঠিকই ফেসবুক ব্যবহার করছেন বাংলাদেশের ব্যবহারকারীরা। আর সেই বন্ধ ফেসবুকে বসে ফেসবুক বন্ধে সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ও তীব্র সমালোচনা করছেন তাঁরা।
সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্তকে ‘মাথাব্যথার কারণে মাথা কেটে ফেলার’ মতো সিদ্ধান্ত হিসেবে মন্তব্য করছেন অনেকে। সরকারিভাবে বন্ধ ফেসবুকে বিকল্প প্রক্সি সাইটের মাধ্যমে ঢুকে অনেকেই বিদ্রূপ-ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্যসহ কড়া সমালোচনা করছেন। কেউ কেউ আবার কীভাবে প্রক্সি ব্যবহার করে ফেসবুক ব্যবহার কতে পারবেন তার একাধিক পদ্ধতিও জানিয়ে দিচ্ছেন।
জনপ্রিয় ফেসবুকার আরিফ আর হোসাইন ১৯ নভেম্বর বিদ্রূপ করে তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আমি এখন পাপুয়া নিউগিনির প্রক্সি ব্যবহার করিতেছি... এখানের ওয়েদারও ভালো... খাদ্যও রুচিকর। একটু পর মেক্সিকো যাব। থ্যাংকস সরকার আমাদের এভাবে ভ্রমণ করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।’
কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক ১৮ নভেম্বর তাঁর ফেসবুকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুটি পঙক্তির মাধ্যমে উল্লেখ করেন, ‘নিজের দুটি চরণ ঢাকো তবে ধরণী আর ঢাকিতে নাহি হবে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জুতা আবিষ্কার।’
নির্মাতা আশফাক নিপুণ ১৯ নভেম্বর বিদ্রূপ করে ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘একদল সাবমেরিন কেবলে ঢুকতে দেয় নাই তথ্য পাচার হয়ে যাওয়ার ভয়ে, আরেক দল ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটস অ্যাপ বন্ধ করে দিয়েছে তথ্য আদান-প্রদানের ভয়ে। দুই দলকেই আমার অভিনন্দন, কারণ বাচ্চা বাচ্চা পোলাপাইনের চিকন বুদ্ধির কাছে হেরে যাওয়াই বড় কথা না, খেলায় অংশগ্রহণ করাটাই বড় কথা।’
পিনাকি ভট্টাচার্য তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে ১৯ নভেম্বর লিখেছেন, ‘সকল বজ্র আটুনির ফস্কা গেরো থাকে। ফেসবুক বন্ধের বজ্র আটুনির ফস্কা গেরো দিয়ে রাষ্ট্রশক্তিকে ভেংচি কাটা এই সাহসী ও অভূতপূর্ব তারুণ্যের বাংলাদেশকে অভিবাদন। দিন আসলেই বদলেছে।’
প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা লিখেছেন, ‘ধরা যাবে না ছোঁয়া যাবে না বলা যাবে না কথা...’
সাংবাদিক ও অ্যাকটিভিস্ট আনিস রায়হান লিখেছেন, ‘ইন্টারনেটে তরুণদের প্রতিবাদী ভূমিকাকে স্তব্ধ করে দিতে তারা ব্যবহার করল বাঙালির আবেগের সঙ্গে যুক্ত এই বিষয়টিকে। দলের স্বার্থরক্ষায় তারা বরাবরই যুদ্ধাপরাধের বিচারের ইস্যুকে ব্যবহার করেছে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটল না। মানুষের মুখ বন্ধ রাখার এ এক অভিনব কায়দা!’
১৯ নভেম্বর অভিনেত্রী মৌসুমী নাগ লিখেছেন, ‘আমিও ফেসবুক ইউজ করছি...’
শামীম আরা নীপা ২০ নভেম্বর একটি স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘অবরুদ্ধ ফেসবুকবাসীকে শুভেচ্ছা স্বাগতম!!! আমরা সবাই পরিবর্তন চাই।’
আসিফ মুজতবা ব্যঙ্গ করে গান প্যারোডি করে ১৯ নভেম্বর ফেসবুক স্টাটাসে লিখেছেন, ‘পারবো না করতে সরকারের আদেশ অমান্য, তাই চ্যাটিং করাতেও বিরত, আসতে হবে না আর ফেসবুকে, রঞ্জনা আমি আর ফেসবুকে আসব না।’
বাহাউদ্দিন বাহার নামে একজন লিখেছেন, ‘আপনি বেডরুমে ফেসবুক করেন। বেডরুম পাহারার দায়িত্ব সরকারের নয়।’
সরব মন্ত্রী, আওয়ামী লীগ
সরকারের নির্দেশে বন্ধ থাকা ফেসবুকে রীতিমতো সরব রয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। ফেসবুক বন্ধ থাকা অবস্থাতেই গত ১৯ নভেম্বর মন্ত্রণালয় আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার খবর ফেসবুকে দেন তিনি। এ ছাড়া গতকাল শুক্রবার মিট ফ্রিল্যান্সার নামে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া একটি অনুষ্ঠানে নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার দেন তিনি।একই অবস্থা দেখা গেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে। সেখানে গতকাল সকাল ৬টায় সবশেষ তথ্য হালনাগাদ করা হয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে। পেজের অ্যাডমিনদের পক্ষ থেকে একটি ফরাসি কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদশের স্যাটেলাইট-বিষয়ক চুক্তির খবর প্রকাশ করা হয়েছে।
এসব ফেসবুক পেজের ছবির স্ক্রিনশট নিয়ে অনেকেই ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনা করছেন। এ বিষয়ে কেউ কেউ বলছেন, ‘সরকার ফেসবুক বন্ধ করলে তারা চালাচ্ছে কীভাবে?’ কেউ কেউ আবার মন্তব্য করছেন, ‘সরকারি দলও বিকল্প পদ্ধতিতে ফেসবুক চালিয়ে সরকারের নির্দেশ অমান্য করছে।’এমন নানা ধরনের তর্ক-বিতর্ক এখনো চলছে ফেসবুকে। গত বুধবার থেকে সরকারিভাবে ফেসবুক সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হলেও সেদিন রাত থেকেই বিভিন্ন উপায়ে অনেকেই ফেসবুকে প্রবেশ করছেন। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার এই বিকল্প উপায়ে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে বুধবার দুটি আলাদা নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগের বেশ কয়েকটি মাধ্যম বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। শিগগিরই এগুলো আবার খুলে দেওয়া হবে বলেও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।