লাশ আটকে বেশি বিল আদায়ের চেষ্টা!

রোগীর লাশ আটকে এবং উপরি খরচ দেখিয়ে বেশি বিল আদায়ের চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী শহরের এক হাসপাতালের বিরুদ্ধে। মৃত প্রসূতির স্বজনদের অভিযোগ রোগী মারা যাওয়ার পর তিন ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও লক্ষ্মীপুরের আমানা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নানা ‘টালবাহানা করে’ লাশ নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউতে) আটকে রাখে। পরে সেই তিন ঘণ্টার জন্যও অতিরিক্ত বিল দাবি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, অভিযোগ স্বজনদের।
অন্যায় বিল দাবির বিরুদ্ধে স্বজনদের ক্ষোভের মুখে হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে যান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে অতিরিক্ত বিল আদায়ের চেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করেছে কর্তৃপক্ষ। আজ বুধবার রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
মৃত রোগীর স্বজনরা জানান, বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার শান্তাহার এলাকার কামরুজ্জামানের স্ত্রী সুরভী জামান প্রসব বেদনা নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে আমানা হাসপাতালে ভর্তি হন। ভর্তির কিছুক্ষণ পর তাঁকে সিজার করানো হয়। সুরভী একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। বাচ্চাটি সুস্থ থাকলেও হার্টের সমস্যার কারণে সুরভী জামানের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। পরে তাঁকে ওই হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়।
রোগীর স্বজন মোস্তাকিন হোসেন জানান, আইসিইউতে থাকা অবস্থায় আজ বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে প্রসূতি সুরভী জামান মারা যান। কিন্তু তাঁর লাশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বের না করে নানাভাবে টালবাহানা শুরু করে। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃত সুরভীকে আইসিইউ থেকে বের করে দেয়।
সেই সঙ্গে ৪৩ হাজার টাকার একটি বিলও রোগীর স্বজনদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেই বিলের মধ্যে মৃত্যুর পরও রোগীকে আইসিইউতে রাখার সময় উল্লেখ করে সেই সময় অনুযায়ী বিল পরিশোধের কথা বলা হয় বলে অভিযোগ করেন মোস্তাকিন হোসেন।
রোগীর স্বামী কামরুজ্জামান বলেন, অতিরিক্ত প্রায় ১৫ হাজার টাকার ভুয়া বিল করে লাশ প্রথম দিকে আটকে রাখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে চ্যালেঞ্জ করা হলে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একে একে সটকে পড়তে থাকে।
রোগীর আরেক স্বজন লিটন হোসেন জানান, চাপের মুখে শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মৃত রোগীকে আইসিইউ থেকে বের করে দিতে বাধ্য হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে লাশ নিয়ে নিয়ে চলে যায় তার আত্মীয়স্বজন।
হাসপাতালের দেওয়া বিল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সেখানে ওষুধ বাবদ ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৩০০ টাকা, আইসিইউ ভাড়া ধরা হয়েছে ১৬ হাজার টাকা, প্যাথলজি চার্জ তিন হাজার টাকা, কেবিন চার্জ চার হাজার টাকাসহ অন্যান্য চার্জ তিন হাজার ৭০০ টাকা।
রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করেন, সিজার হওয়ার পর থেকেই রোগীকে আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। এমনকি সিজারের আগেও রোগীকে কেবিনে নেওয়া হয়নি। অথচ সেই কেবিনের নামেই চার্জ ধরা হয়েছে চার হাজার টাকা।
এ বিষয়ে রাতে আমানা হাসপাতালের তিনটি হট নম্বরে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সবকটি নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।
পরে হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মোবারক হোসেন অতিরিক্ত বিল আদায়ের কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, যা বিল হয়েছে, তাই রোগীর স্বজনদের দিতে বলা হয়েছিল।