গৃহশ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিতে নীতিমালা আসছে

শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, গৃহশ্রমিকরা ২৪ ঘণ্টা কাজ করেন। তাঁদের কোনো নির্দিষ্ট বেতন নেই। সাপ্তাহিক ছুটি, থাকার ব্যবস্থা এমনকি চিকিৎসাও জোটে না তাঁদের কপালে। কোনো সভ্য দেশে এটি কল্পনাও করা যায় না। গৃহশ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার নীতিমালা তৈরি করছে। আগামী ডিসেম্বরে অনুমোদনের জন্য এটি মন্ত্রিসভায় উঠবে।
আজ রোববার দুপুরে কিশোরগঞ্জ কালেক্টরেট সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত শ্রমিকদের মধ্যে বীমার চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে মুজিবুল হক চু্ন্নু এ কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘বিজিএমই, বিকেএমইসহ যারা বিদেশে পণ্য রপ্তানি করেন, সেই রপ্তানির শতকরা তিন পয়সা করে শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের জন্য ব্যাংক কেটে রাখবে। এ ধরনের একটি আইন হয়েছে, গেজেটও প্রকাশ করা হয়েছে। আইনটি কিছুদিনের মধ্যেই কার্যকর হবে। আমি আশা করছি, কয়েক বছরেই এ খাত থেকে শ্রমিকদের জন্য তহবিলে তিন থেকে চার হাজার কোটি টাকা জমা হবে। শ্রমিকরা এ থেকে লাভবান হবেন। বর্তমানে এ তহবিলে ১২০ কোটি টাকা জমা আছে।’
মুজিবুল হক চুন্নু সভায় জানান, বিভিন্ন কোম্পানিকে আইনের আওতায় ঘোষিত লাভের শতকরা পাঁচ ভাগ শ্রমিক কল্যাণে ব্যয় করার জন্য বলা হয়েছে। আর এ থেকে শতকরা ১০ ভাগ সরকারি তহবিলে জমা দিতে হবে। কয়েকদিন আগে একটি টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান প্রায় ২০ কোটি টাকা তহবিলে জমা দিয়েছে। এ ছাড়া শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিল থেকে অসুস্থ, গর্ভবতী শ্রমিক ও তাঁদের মেধাবী সন্তানদের পড়ালেখায় আর্থিক সহায়তা করা হচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী আরো জানান, অবসরের পর শ্রমিকদের একটা বড় অঙ্কের টাকা দেওয়া যায় কি না, সেটাও ভাবছে সরকার। তা ছাড়া সারা দেশে শ্রমিকদের জন্য চারটি আবাসন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যেখানে শ্রমিকরা নামমাত্র ভাড়ায় বসবাস করবেন। তাদের জন্য টঙ্গী ও নারায়ণগঞ্জে ৩০০ শয্যার দুটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের কাজ চলছে।
মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘দেশের তিনটি শ্রম আদালতের সবগুলোই ঢাকায়। এর ফলে দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আদালতে আসা বিচারপ্রার্থী শ্রমিকরা চরম হয়রানির শিকার হয়। তারা ন্যায়বিচার পায় না। এ বিষয়টি নিয়েও সরকার কাজ করছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ বর্তমানে দ্বিতীয় স্থানে আছে। মালিক ও শ্রমিকদের সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে পারলে উৎপাদন আরো বাড়বে।’ আগামী তিন বছরে চীনকে হটিয়ে প্রথম স্থানটি বাংলাদেশ দখল করবে বলে তিনি মনে করেন।
সভা শেষে অকালে মারা যাওয়া দুই শ্রমিক পরিবারের সদস্যদের হাতে দুই লাখ টাকা করে গোষ্ঠী বীমার চেক তুলে দেন প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক জি এস এম জাফরউল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিছুজ্জামান, কিশোরগঞ্জ সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) খন্দকার ফজলে রাব্বি, জেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক লুৎফুল আরেফিন গোলাপ, শ্রমিককল্যাণ অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক খুর্শেদ আলম, গোষ্ঠী বীমার সমন্বয়কারী এ বি সিদ্দিক মিন্টু, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি এ বি এম সিরাজুল ইসলাম, নির্মাণশ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ নূরুল হক।