মনোনয়ন না পেয়ে ‘বিদ্রোহী’ বিএনপি নেতারা

কেন্দ্র থেকে রাজশাহীর ১৩টি পৌরসভায় দলীয় মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। তবে তা মানতে নারাজ একাধিক পৌরসভার দলীয় নেতাকর্মীরা। বেশ কয়েকজন প্রার্থী সংবাদ সম্মেলন করে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে বিএনপি রাজশাহী জেলা কমিটির নেতারা বলছেন, নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই সবাই এক হয়ে যাবে। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মেনেই নির্বাচন করবেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
রাজশাহীর ১৪টি পৌরসভার মধ্যে ১৩টিতে এবারে নির্বাচন হচ্ছে। এর মধ্যে মেয়র পদে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন গোদাগাড়ী পৌরসভায় পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী, কাকনহাট পৌরসভায় পৌর বিএনপির সহসভাপতি হাফিজুর রহমান, তানোর পৌরসভায় উপজেলা যুবদলের সভাপতি মিজানুর রহমান মিজান, মুণ্ডুমালা পৌরসভায় পৌর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ কবির, নওহাটা পৌরসভায় সাবেক মেয়র মকবুল হোসেন, কেশরহাট পৌরসভায় পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আলো, ভবানীগঞ্জ পৌরসভায় পৌর বিএনপির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক প্রামাণিক, তাহেরপুর পৌরসভায় পৌর বিএনপির সভাপতি আবু নাঈম মো. শামসুর রহমান মিন্টু, দুর্গাপুর পৌরসভায় সাবেক পৌর মেয়র সাইদুর রহমান মন্টু, পুঠিয়া পৌরসভায় পৌর বিএনপির সহসভাপতি আসাদুল ইসলাম আসাদ, চারঘাট পৌরসভায় পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকিরুল ইসলাম বিকুল এবং আড়ানী পৌরসভায় ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি তোজাম্মেল হক।
বিএনপির দলীয় মনোনয়ন থেকে ছিটকে পড়েছেন তানোর পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও উপজেলা বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক আবুল হাসনাত মোখলেসুর রহমান ওরফে ফিরোজ সরকার এবং আড়ানী পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম।
আড়ানী পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপি নেতা তোজাম্মেল হক। তাঁর মনোনয়নের বিরুদ্ধে গতকাল বুধবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্থানীয় বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা। আড়ানী পৌর বিএনপি কার্যালয়ে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে মেয়র পদে দলের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন পরিবর্তন করে বর্তমান মেয়র ও আড়ানী পৌর বিএনপির আহ্বায়ক নজরুল ইসলামকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় বিএনপি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে নজরুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায়ের সিদ্ধান্তের মূল্যায়ন না করে টাকার বিনিময়ে দীর্ঘ সময় বহিষ্কারাদেশে থাকা এক অসাংগঠনিক ব্যক্তিকে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় বিএনপির এই সিদ্ধান্ত স্থানীয় পৌর বিএনপির পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।’
সংবাদ সম্মেলনে আড়ানী পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ হোসেন, আবদুল খালেক, দুলাল হোসেন, আসমত আলী, পৌর শ্রমিকদলের সভাপতি খেতাব আলী, সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম, পৌর জাসাস সভাপতি এনামুল আযম বেনু, পৌর যুবদল সভাপতি রুহুল আমিন, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হক, পৌর ছাত্রদল সভাপতি মহিদুল ইসলাম জুয়েল, সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ রানা, আড়ানী কলেজ ছাত্রদল সভাপতি সোহেল রানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় তাহেরপুরে পৌর নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তাহেরপুর পৌর ছাত্রদল সভাপতি এস এম আরিফুল ইসলাম আরিফ। গতকাল বুধবার দুপুরে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন।
আরিফুল ইসলাম আরিফের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তাহেরপুর পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আমজাদ হোসেন মণ্ডল, তাহেরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্রদলের সহসভাপতি শাহ আলম, পৌর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক বকুল হোসাইন ও তাহেরপুর পৌর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক শাওন আহমেদ।
এ ছাড়া তানোর পৌরসভার বর্তমান মেয়র ফিরোজ সরকার, কাটাখালি পৌর বিএনপি সভাপতি সিরাজুল ইসলাম, নওহাটা পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুদ হাসান পিন্টু কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নিজ নিজ পৌরসভায় মেয়র পদে নির্বাচন করবেন বলে দাবি করেছেন বিএনপির একাধিক নেতা।
এ ব্যাপারে জানতে রাজশাহী জেলা বিএনপি সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির বিশেষ সম্পাদক নাদিম মোস্তফার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
তবে জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন জানান, কয়েকটি পৌরসভায় একাধিক দলীয় প্রার্থী মাঠে থাকলেও শেষ পর্যন্ত সবাই এক হয়ে যাবে। ১৩ ডিসেম্বর প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। এর আগেই বিএনপি ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনের মাঠে নামতে পারবে বলে মনে করেন তিনি।
গোলাম মোস্তফা মামুন বলেন, এখন যে যাই বলুক, দল মনোনীত প্রার্থীর পক্ষেই শেষ পর্যন্ত সবাই থাকবেন। এরপরও দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে নির্বাচন করলে তার বিরুদ্ধে দল কঠিন সিদ্ধান্ত নেবে।