মিরকাদিমে লড়াই নৌকা আর ধানের শীষে

ইছামতী-ধলেশ্বরী নদীর মোহনায় অবস্থিত মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম পৌরসভায় নির্বাচনী মাঠ জমজমাট হয়ে উঠেছে। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অফিসপাড়া—সর্বত্র নির্বাচনের আলোচনা। জিতবে কে? কে হবেন মেয়র? কে হবেন কাউন্সিলর? প্রার্থীরা চষে বেড়াচ্ছেন পাড়া-মহল্লা।
ভোটারদের ভাষ্য, এ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের শক্তিশালী বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর মধ্যে। পাশাপাশি দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলেও স্থানীয়ভাবে সৎ ও সুন্দর মনের মানুষ, যাঁকে দিয়ে এলাকার উন্নয়ন হবে, তাঁকেই নির্বাচিত করবেন বলেও মনে করছেন ভোটাররা।
এদিকে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর অভিযোগ, বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শহিদুল ইসলাম শাহীন নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে হুমকি-ধমকিসহ নানা চেষ্টা চালাচ্ছেন।
তবে শাহীন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আবার জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী তিনি।
মুন্সীগঞ্জের বন্দরনগরী মিরকাদিম পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৫ সালে। ৩৩ হাজার ৫১৪ জন ভোটারের মিরকাদিম পৌরসভায় প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই ভোটের ময়দানে নেমে পড়েছেন প্রার্থীরা। ছুটছেন ভোটারদের বাড়ির দুয়ারে দুয়ারে। প্রার্থীদের গণসংযোগের পাশাপাশি শহরজুড়ে চলছে মাইকিং। পোস্টার ঝুলছে শহরের অলিগলিতে।
বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী শামসুর রহমান অভিযোগ করেন, ‘নির্বাচনের দিন ১১টার মধ্যেই নির্বাচন শেষ হয়ে যাবে, কাউকে ভোটকেন্দ্রে যেতে হবে না—আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এমন প্রচার চালাচ্ছেন। আমার দলের কর্মীদের নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র পদপ্রার্থী মনসুর আহমেদ কালাম অভিযোগ করেছেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রার্থী ভোট ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করছেন। নির্বাচনে লগি-বৈঠা ব্যবহারের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’
আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র শহিদুল ইসলাম এ ধরনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ করে তাঁরা নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারবেন না। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমি বিজয়ী হব। বিদ্রোহী প্রার্থীর উপস্থিতি আমার জয়ে কোনো বাধা হতে পারবে না।’
পৌরসভার বাসিন্দা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘দলের প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে, এটা উচ্চমহল চিন্তা। আমার এলাকায় যাঁকে দিয়ে কাজ হবে, তাঁকেই ভোট দেব।’
আরেক ব্যবসায়ী জানান, তাঁর বিশ্বাস এখানে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। অতীতে এ পৌরসভায় ভোটের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয়নি।
মিরকাদিম পৌরসভার রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সাল কাদের বলেন, ‘কেউ লিখিত অভিযোগ করলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন, সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
মিরকাদিম পৌরসভায় মেয়র পদে নির্বাচন করছেন ছয়জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) মোহাম্মাদ হোসেন রেনু (বাইসাইকেল), ইসলামী খেলাফত আন্দোলনের আবদুল গফুর মিয়া (হাতপাখা) ও জামাল হোসেন স্বতন্ত্র হিসেবে জগ প্রতীকে নির্বাচন করছেন।
এ ছাড়া নয়টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন ৩০ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ১০ জন। মোট ৩৩ হাজার ৫১৪ ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৭ হাজার ৩৯৪ জন আর নারী ভোটার ১৬ হাজার ১২০ জন। ১৭টি ভোটকেন্দ্রের ৮০টি ভোটকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে এবারের নির্বাচন।