দুই মন্ত্রীর শুনানিতে যা হলো

দুই মন্ত্রীকে সাজা দেওয়ার মাধ্যমে পুরো জাতির কাছে বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। আজ রোববার সকালে খাদ্য ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর আদালত অবমাননার মামলার শুনানিতে এ কথা বলেছেন তিনি।
আজ সকাল ৯টা ২৮ মিনিটে শুরু হয় শুনানি। শুরুতেই খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদারকে উদ্দেশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনারা যে জবাব দাখিল করেছেন, তা পড়ে শোনান।’
জবাবে বাসেত মজুমদার বলেন, ‘মহামান্য আপিল বিভাগ আদালত অবমাননার বিষয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে যে আদেশ দিয়েছেন, আমরা তার জবাব দাখিল করতে আদালতে উপস্থিত হয়েছি। আদালত অবমাননার অভিযোগের বিষয়ে আমরা নিঃশর্তে ক্ষমা চাইছি। এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো মন্তব্য করব না বলে অঙ্গীকার করছি। সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি আমাদের যথাযথ সম্মান রয়েছে। আমরা এ ধরনের আচরণ ভুলক্রমে করে ফেলেছি।’
এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেলকে আদালত অবমাননা ও বিচারপতিদের সম্পর্কে মন্তব্যের বিষয়ে জনকণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদটি পড়ে শোনাতে বলেন। তখন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি পড়ে শোনান।
প্রতিবেদনে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুনতাসীর মামুন বক্তব্য দেন বলে প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর একটি লিখিত বিবৃতি ওই সেমিনারে পড়ে শোনানো হয় বলে জনকণ্ঠের প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়। সেমিনারে দুই মন্ত্রী এবং মুনতাসীর মামুন প্রধান বিচারপতি এবং আদালতের কঠোর সমালোচনা করেন। প্রতিবেদনটি পড়া শেষ হলে বসে পড়েন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনারা জানেন ইতোপূর্বে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায়ের বিষয় নিয়ে জনকণ্ঠের সাংবাদিক স্বদেশ রায় আদালতের সমালোচনা ও মন্তব্য করেছেন। তিনি ছিলেন একজন মিডিয়াপারসন। কিন্তু আপনারা তো সাংবিধানিক পদ ধারণ করেন। আপনারা কেন এ বিষয়ে মন্তব্য করলেন?’
এরপর আদালত বলেন, ‘স্বাধীনতার পর তিনজন অ্যাটর্নি জেনারেল পেয়েছে এ দেশ, যাঁরা খুবই সৎভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁরা হলেন মাহমুদুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম এবং বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।’
সুরেন্দ কুমার সিনহা বলেন, ‘মীর কাসেম আলীর রায়ে আপনারা দেখবেন, কার কাছ থেকে কারা টাকা নিয়েছেন। টাকা নিয়ে খেলা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতের ডিগনিটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেক হাউজিং আমরা করছি। কিন্তু কারো সাথে কোনো আপস করি না। আমরা চাইলে জনকণ্ঠে প্রকাশিত অন্যদেরও ডাকতে পারতাম। কিন্তু আপনারা দুজনেই সাংবিধানিক পদ ধারণ করেন। আপনাদের মাধ্যমেই পুরো জাতিকে মেসেজ দিচ্ছি, যদি কেউ এ ধরনের আচরণ করে তাহলে আদালত কত কঠোর হতে পারে।’
এ সময় আদালত তাদের নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার আবেদন খারিজ করে তাঁদের ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে সাত দিন কারাদণ্ড প্রদান করেন। সাত দিনের মধ্যে এই টাকা অ্যাটর্নি জেনারেলকে লিভার ফাউন্ডেশন ও ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে অনুদান হিসেবে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া মীর কাসেম আলীর আপিলের রায়কে কেন্দ্র করে প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের সমালোচনা করে গত ৫ মার্চ রাজধানীতে এক সেমিনারে বক্তব্য দেন সরকারের দুই মন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও আ ক ম মোজাম্মেল হক। প্রধান বিচারপতি তাঁর আসনে থাকতে চাইলে ‘অতিকথন’ বন্ধ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন এক মন্ত্রী।
একই সঙ্গে মীর কাসেম আলীর মামলায় আপিল বিভাগের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি যেসব মন্তব্য করেছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে বাদ দিয়ে নতুন বেঞ্চ গঠন করে ওই মামলায় পুনরায় শুনানি করার আহ্বান জানান দুই মন্ত্রী।