‘পোলাপাইনরে দেহি স্কুলে যাইতাছে, আমারও মন চায়’

রেজা ও সেলিম দুই ভাই। রেজা বড় আর সেলিম ছোট। বছর খানেকের ছোট-বড় তারা। কখনো কুষ্টিয়ার বাঁধে, ফুটপাতে, আবার কখনো রেলস্টেশনে বসবাস তাদের। বুঝতে শেখার পর থেকেই তারা টোকাইয়ের কাজ করে। ফুটপাতের ডাস্টবিনে পড়ে থাকা খাবার খেয়ে জীবন বাঁচে।
সকালে বের হয়ে ডাস্টবিনে খাবার মিললে সকালের নাশতা হয় দুজনের। না পেলে সকালের খাবারটা বাদ পড়ে যায়। ছোটবেলা থেকেই তারা ফুটপাতের বিভিন্ন জিনিস কুড়িয়ে ভাঙাড়ির দোকানে বিক্রি করে।
এক রাতে কুষ্টিয়ার এনএস রোডে এ প্রতিবেদকের কথা হয় রেজা ও সেলিমের সঙ্গে। জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘তোমরা কোথায় থাকো?’
‘কোথায় থাকব? কখনো বাঁধে, কখনো ফুটপাতে, আবার কখনো রেলস্টেশনে’, উত্তরে জানায় রেজা।
মা-বাবার কথা জিজ্ঞেস করতেই চোখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকে দুজনের। মা-বাবা নিয়ে কোনো কথাই বলেনি তারা।
রেজা ও সেলিম জানায়, তারা সকালে বের হয়ে ডাস্টবিন বা ময়লার স্তূপ থেকে পুরোনো বোতল-কাগজ-লোহালক্কড় ইত্যাদি সংগ্রহ করে বস্তায় ভরে। এরপর ভাঙাড়ির দোকানে বিক্রি করে।
‘তিনবেলা খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করো কীভাবে?’ এমন প্রশ্নের জবাবে রেজার বলে, ‘ক্যান, ময়লার মধ্যে অনেক খাওন থাকে। ওইগুলা খাইয়া নিই।’
পুরোনো বোতল-কাগজ-লোহালক্কড় বিক্রি করে দিনে ৪০ থেকে ৬০ টাকা আয় হয় দুজনের। পুরো টাকাই জমায় তারা। তাদের স্বপ্ন, জমানো টাকা দিয়ে স্কুলে ভর্তি হবে।
রেজা বলে, ‘পত্তেক দিনই ভাঙাড়ির দোকানে বোতলসহ অনেক জিনিস বেচি। বেশির ভাগ দিন ৩০-৪০ টাকা হয়। মাঝেমধ্যে ৬০ টাকাও হয়। টাকা জমাইয়া সামনের বছর স্কুলে যামু। স্কুলের জামা কিনমু। বই কিনমু। সকালে কত পোলাপাইনরে দেহি ব্যাগ লইয়া স্কুলে যাইতাছে। আমারও মন চায়।’
বড় হয়ে কী হতে চাও—জানতে চাইলে লাজুক হেসে রেজা বলে, ‘ক্যান, ভাঙাড়ির দোকান দিমু। ময়লা কুড়ামু না, কিনমু।’