রোববারের মধ্যে বাঁশখালীর গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দাবি

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতিবাদ মিছিলে গুলির ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের আগামীকাল রোববারের মধ্যে মুক্তি দাবি করেছে গণ্ডামারা বাঁচাও কমিটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এর সমাধান করা হবে।
আজ শনিবার দুপুরে সার্কিট হাউজে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে গণ্ডামারা বাঁচাও কমিটির এক মতবিনিময় সভায় গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির দাবি জানানো হয়। সভাটি দুপুর ১টায় শুরু হয়ে ৩টা পর্যন্ত চলে।
সভায় কমিটির প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র ও বাঁশখালীর সাবেক সংসদ সদস্য মাহামুদুল ইসলাম, সভাপতি বদি আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে জেলা প্রশাসক মো. মেজবাহ উদ্দিনের নেতৃত্বে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়, এখানে পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করা হবে না। এলাকার জনগণকে সন্তুষ্ট করেই এখানে সরকার কয়লাভিত্তিক আধুনিক বিদ্যুৎপ্রকল্প স্থাপন করবে।
অপরদিকে গণ্ডামারা বাঁচাও কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, যদি জনগণের ক্ষতি না করে সেখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়, তাহলে জনগণ একে স্বাগত জানাবে। এ সময় এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তও দাবি করেন নেতারা।
গণ্ডামারা গ্রামে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চীনের অর্থায়নে এস আলম গ্রুপের মালিকানায় একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। গত ৪ এপ্রিল এ প্রকল্পের বিরোধিতা করে এলাকাবাসীর সমাবেশে হামলার ঘটনায় চারজন নিহত ও অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়। এ ঘটনায় তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে সাড়ে ছয় হাজারের অধিক মানুষকে।
গত ৮ এপ্রিল হাদিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বিশাল সমাবেশে গত রোববার উপজেলা পরিষদ ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এরপর ৯ এপ্রিল ‘আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে’ ১৫ দিনের জন্য স্থগিতের ঘোষণা দেন গণ্ডামারা বসতভিটা ও কবরস্থান রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক লিয়াকত আলী। এর পর গণ্ডামারার পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।
পরে সেখানে কয়লা বিদ্যুৎবিরোধী ২০১ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়, যার নাম দেওয়া হয় ‘গণ্ডামারা বাঁচাও কমিটি’। এ কমিটির প্রধান উপদেষ্টা করা হয় চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র ও বাঁশখালীর সাবেক সংসদ সদস্য মাহামুদুল ইসলামকে। এ কমিটির সভাপতি বদি আহমেদ আর সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক।
গত ১৩ এপ্রিল নয় দফা দাবিতে নতুন করে আন্দোল শুরু করে এ কমিটি। কমিটির প্রধান দাবি ছিল, পাঁচদিনের মধ্যে নিহতদের পরিবারের সদস্যকে ১৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ এবং গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দেওয়া।
এরপর গতকাল শুক্রবার বিকেলে জেলা প্রশাসক মো. মেজবাহ উদ্দিন গণ্ডামারা গ্রামে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অনুদানের চেক বিতরণ করেন। এ সময় এ ঘটনায় আহত ১১ জনের প্রত্যেক পরিবারকে এক লাখ টাকা এবং ক্ষতিগ্রস্ত আরো ৪৭ পরিবারকে ২৫ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়।