ভবন নির্মাণে বাঁশ : ঠিকাদার গ্রেপ্তার

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনায় উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ দোতলা ভবন নির্মাণে রডের বদলে বাঁশ দেওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি ঠিকাদার মণি সিংহকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যৌথ অভিযান চালিয়ে আজ শুক্রবার সকালে ঢাকার পল্লবী এলাকার বহুতল ভবনের একটি ফ্ল্যাট থেকে মণি সিংকে (৪৫) গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জয় ইন্টারন্যাশনালের মালিক এবং মামলার এক নম্বর আসামি।
সূত্র জানিয়েছে, ওই ফ্ল্যাটে মণি সিংহের স্ত্রীর বান্ধবী বসবাস করেন। মণি সিলেটের কোতোয়ালি থানার ৭৮ সাগরদিঘী পাড় এলাকার বাসিন্দা।
দুদক কুষ্টিয়া সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবদুল গাফ্ফার এবং র্যাব ৪-এর সহকারী পরিচালক কামরুল ইসলাম গ্রেপ্তার অভিযানে নেতৃত্ব দেন। মণি সিংকে গ্রেপ্তারের পর পরই বিকেলে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে বিচারক ইমদাদুল হক তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
সিএমএম আদালতের উপসহকারী পরিদর্শক (এএসআই) শহীদুর রহমান বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ফাইটোস্যানিটারি শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের আওতায় দুই কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের কার্যালয় ও পরীক্ষাগার (অফিস কাম ল্যাবরেটরি) দোতলা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের কাজ এরই মধ্যে ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। ভবনটির লুভার নির্মাণে রডের বদলে বাঁশ ব্যবহারের অভিযোগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নির্মল কুমার দের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গত ৭ এপ্রিল সরেজমিন পরিদর্শন করে এবং অভিযোগের সত্যতা পায়।
ওই দিনই প্রতিনিধিরা নির্মাণকাজ বন্ধের নির্দেশ দেন। এক মাস ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। ৮ এপ্রিল প্রকল্পের ক্রয় বিশেষজ্ঞ আইয়ুব হোসেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল, ৯ এপ্রিল ফাইটোস্যানিটারি শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের পরিচালক (উইং) সৌমেন সাহার নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি এবং ১১ এপ্রিল কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপপ্রাধন মাহবুবুল হক পাটোয়ারীর নেতৃত্বে আরেকটি প্রতিনিধিদল সরেজমিন পরিদর্শনে যান।
এ ঘটনার পর বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে প্রকল্প পরিচালক সাদেক ইবনে শামসকে কিশোরগঞ্জ ও ক্রয় বিশেষজ্ঞ আইয়ুব হোসেনকে বরগুনায় জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়।
এরপর গত ২৯ এপ্রিল কৃষি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সংসদ সদস্য মকবুল হোসনের নেতৃত্বে চার সদস্যের আরেকটি প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ ঘটনায় গত ১১ এপ্রিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সিনিয়র মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক ( দায়িত্বপ্রাপ্ত ) মেরিনা জেবুন্নাহার বাদী হয়ে দামুড়হুদা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জয় ইন্টারন্যাশনালের মালিক মণি সিং, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ারিং কনসোর্টিয়াম লিমিটেডের (ইসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সাত্তার, প্রকল্পের ক্রয় বিশেষজ্ঞ আইয়ুব হোসেন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক কামাল হোসেনকে আসামি করা হয়।
১৩ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আবদুল হালিম মামলাটিকে দুদক কুষ্টিয়া জেলা সমন্বয় কার্যালয়ের কাছে হস্তান্তরের আদেশ দেন।