খুলনা ও ঝালকাঠির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র প্রভাবে খুলনা ও সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে বেশ কিছু বাড়িঘরও। বেড়েছে দুই জেলা শহরের আশপাশের নদ-নদীর পানিও।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে রাস্তায় মানুষের চলাচল কম দেখা গেছে। দোকানপাটও অধিকাংশ ছিল বন্ধ। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে।
খুলনা প্রতিনিধি জানান, খুলনা নগরী ও এর আশপাশে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর মাঝেমধ্যে দমকা হওয়া বইছে। খুলনা শহরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আর রূপসা ও ভৈরব নদীর জোয়ারের পানি উপচে লোকালয় প্রবেশ করছে।
খুলনা শহরের খান জাহান আলী সড়ক, রয়েল মোড়, শান্তিধাম মোড়, টুটপাড়াসহ বিভিন্ন সড়কে হাঁটুপানি জমে গেছে। এসব এলাকায় পানির মধ্যদিয়েই যানবহন চলাচল করছে। তবে আজ শনিবার সড়কে যানবাহন চলাচল ছিল অনেক কম। দোকানপাট ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতিষ্ঠান বেশির ভাগই বন্ধ রয়েছে।
খুলনার জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান জানিয়েছেন, জেলায় ২৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত এসব কেন্দ্রে প্রায় ২০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
জেলা প্রশাসক আরো জানান, জেলার উপকূলীয় এলাকা কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছায় মোট তিন হাজার ৭০০ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব এলাকায় মাইকিং করে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য লোকজনকে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে।
এদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে খুলনা থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে না।
ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র প্রভাবে ঝালকাঠিতে আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দমকা হাওয়ায় অর্ধশতাধিক কাঁচাঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। জেলা সদরসহ চার উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ফলদ ও বনজ গাছ উপড়ে পড়েছে। এতে সব জেলায় সকাল থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। ঝড়ো হাওয়ার প্রভাবে সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন-চার ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে নিম্নাঞ্চলের ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। নদীতে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের নৌযান চলাচল। নিরাপত্তার জন্য সকাল থেকেই নদীতীরবর্তী এলাকার সাত শতাধিক মানুষ সাইক্লোন শেল্টার সেন্টারে আশ্রয় নিয়েছে।
ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভারি বৃষ্টিপাত ও নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কাঁঠালিয়া উপজেলার শৌলজালিয়া ইউনিয়নের রগুয়ার চর এলাকায় দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে ও স্থানীয় সড়ক অতিক্রম করে আমুয়া, চিংড়াখালী, মশাবুনিয়া, পাটিখালঘাটা ও আওড়াবুনিয়ার ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলা পর্যায়ে একটি ও জেলার চারটি উপজেলায় একটি করে মোট পাঁচটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের আওতায় মোট ৪০টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
জরুরি ভিত্তিতে ৫০ টন চাল ও এক লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে বলে জেলা প্রশাসক মো. মিজানুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন। এ ছাড়া জেলার সব সাইক্লোন শেল্টার সেন্টার খোলা রাখা, জেলার চারটি উপজেলা পরিষদ, ৩২টি ইউনিয়ন পরিষদ ও দুটি পৌরসভাকে সতর্ক থাকাসহ সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আজ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসে উপস্থিত থাকার নির্দেশনাও জারি করা হয়েছে।