চট্টগ্রামে নিহত ১২, আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি

চট্টগ্রামের ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র আঘাতে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বাঁশখালী উপজেলার খানখানাবাদ ইউনিয়নে সাতজন, সীতাকুণ্ড উপজেলা ও নগরীর হালিশহরে দুজন করে মোট চারজন এবং নগরীর শোলক বহর এলাকায় এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে ঘরবাড়ি, ফসল ও গৃহপালিত প্রাণীর।
ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আজ শনিবার বিকেল ও সন্ধ্যার পর চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে দুই দফায় সংবাদ সম্মেলন করেন জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন। সেখানেই তিনি এসব তথ্য জানান।
জেলা প্রশাসক জানান, বিকেলে বাঁশখালী উপজেলার খানখানাবাদ ইউনিয়নে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রবল জলোচ্ছ্বাসে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
বিকেলে নগরীর হালিশহরে দুই ভাই পানিতে ভেসে গিয়ে মারা গেছে। তাদের মধ্যে একজনের লাশ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া শোলক বহর এলাকায় পানিতে পড়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
এর আগে সকালে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় জঙ্গল ছলিমপুর এলাকায় ভূমিধসে মা ও ছেলে নিহত হয়েছে। এরা হলো কাজল বেগম (৪৫) ও তার ছেলে বেলাল হোসেন (১০)।
জেলা প্রশাসক আরো জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের কারণে সন্দ্বীপ, আনোয়ারা ও বাঁশখালী উপজেলায় প্রায় আড়াই লাশ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। বাঁশখালী উপজেলার খানখানাবাদ, সনুয়া ও গণ্ডামারা ইউনিয়ন প্রায় সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। ভেসে গেছে মাছের খামার।
এছাড়া সন্দ্বীপ উপজেলার রহমতপুর, আরিয়াইত, উরিরচর, মগধরা ও কালাপানিয়া ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে বেড়িবাঁধ ভেঙে সমুদ্রের পানি প্রবেশ করেছে। এসব এলাকায় ফসল ও মাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ দিতে গিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘বিভিন্ন উপজেলা থেকে আমরা ক্ষয়ক্ষতি জানার চেষ্টা করছি। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১০০ কোটি টাকার মৎস্য ও গবাদি পশুর ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া প্রবল পানির তোড়ে অর্ধশত কোটি টাকার ফসল ভেসে গেছে।
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু বিকেলের দিকে উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে। সন্ধ্যার পর সেটি দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে রূপ নেয়। এ সময়ে সারা দেশে ২১ জনের মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে। উপকূলীয় এলাকায় কমিয়ে আনা হয়েছে সতর্কসংকেত।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়, উপকূল অতিক্রমরত ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু আরো উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বিকেল ৫টায় চট্টগ্রামের কাছে গিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করেছে এবং বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।
অধিদপ্তর আরো জানায়, স্থল নিম্নচাপটি বর্তমানে ফেনী, সীতাকুণ্ড ও খাগড়াছড়ি এবং ভারতের ত্রিপুরা ও এর আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। এটি স্থলভাগের ওপর দিয়ে আরো উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে যাবে। এর প্রভাবে বঙ্গোপনাগরে বায়ুচাপ তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর আরো জানায়, চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে সাত নম্বর বিপদসংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ছয় নম্বর বিপদসংকেত নামিয়ে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।