এক খাল পুনঃখননে পাল্টে যাবে দেড়শো গ্রামের চিত্র

নওগাঁ সদর উপজেলার প্রতাপদহ-হাসাইগাড়ী খাল পুনঃখননের কাজ শুরু হয়েছে। খননকাজ শেষ হলে ওই এলাকার দেড়শো গ্রামের মানুষ উপকৃত হবে। নতুন করে ৫০ হাজার হেক্টর জমি খরা মৌসুমে সেচ সুবিধার আওতায় আসবে।
একই সঙ্গে অকালবন্যা থেকে রক্ষাসহ জমির ধান উৎপাদনে সেচ খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। সারা বছর বিলে পানিপ্রবাহ নিশ্চিতসহ একদিকে দেশীয় প্রজাতির মাছ পাবে জেলেরা, অন্যদিকে বিলের পানি দিয়ে সৃষ্টি হবে মৌসুমি নানা প্রজাতির সবজি চাষ।
নওগাঁ সদর উপজেলার হাসাইগাড়ী ও দুবলহাটি ইউনিয়নের মাঝে অবস্থিত প্রতাপ দহ-হাসাইগাড়ী খাল। নওগাঁ ও জয়পুরহাট জেলার ১৫টি খালের মাধ্যমে পানি আসে এ খালে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে এ খাল সংস্কার না করায় পলি পড়ে ভরাট হয়ে যায়। ফলে প্রতাপদহ-হাসাইগাড়ী এলাকায় অন্তত দেড়শো গ্রামের মানুষ অকালবন্যার শিকার হয়ে আসছে। পানিনিষ্কাশন ঠিকমতো না হওয়ায় বর্ষাকালের আগেই পানিতে তলিয়ে থাকে বিস্তীর্ণ মাঠ।
এ অবস্থায় খালের আশপাশের জলাবদ্ধতার কারণে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমির ধান উৎপাদন ব্যাহত হয়। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) এসব সমস্যা নিয়ে দীর্ঘ জরিপ করে। চলতি বছর বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় ভরাট হওয়া এ খালের তলদেশ খনন কার্যক্রম শুরু করে।
স্থানীয় হাতাশ গ্রামের কৃষক আফতাব মোল্লা ও আবদুল সর্দার বলেন, ‘অনেক দিন ধরে আমরা এ খাল খনন করার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে বলছিলাম। এবার সে আশা পূরণ হতে যাচ্ছে। স্থানীয়দের মতে খালের তলদেশ খনন শেষ হলে জলাবদ্ধতা থাকবে না, তা ছাড়া সারা বছর মিলবে পানি যা থেকে রবি ফসলসহ সব ফসল উৎপাদন করতে পারবে।’
বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এক কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রকল্পের অধীনে ১৫ কিলোমিটার এ খাল পুনঃখনন কাজ বাস্তবায়ন করছে। এরই মধ্যে প্রায় আট কিলোমিটার খননকাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ বাকি কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি।’
স্থানীয় চোয়ার পাড়া প্রাথমিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুন-অর রশীদ জানান, এ খাল খননকাজ এলাকাবাসীর জন্য আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেবে। তিনি বলেন, ‘এখানে দেশীয় মাছের বিশাল মজুদ গড়ে উঠবে। তা ছাড়া খালের পানি দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে বিভিন্ন জাতের রবি ফসল চাষ করবে আশপাশের বাসিন্দারা।’
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নওগাঁ সদর কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রতাপদহ-হাসাইগাড়ী খাল খননকাজ শেষে হলে এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন হবে। খালের দুই ধারে রোপণ করা হবে দেশীয় ও ঔষধি জাতের বিভিন্ন গাছ। এতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কমবে এ এলাকায়।’