সুপ্রিম কোর্ট খুলছে কাল

অবকাশকালীন ছুটি শেষে আগামীকাল বুধবার খুলছে সুপ্রিম কোর্ট। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কয়েকটি মামলা, কামারুজ্জামানের রিভিউর শুনানিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার কারণে সরগরম হয়ে উঠবে আদালত প্রাঙ্গণ।
সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রারের অফিস সূত্রে জানা যায়, এ মাসেই খালেদা জিয়ার কয়েকটি মামলাসহ দেড় ডজন গুরুত্বপূর্ণ মামলা শুনানির জন্য কার্যতালিকায় উঠেছে। এর মধ্যে আদালত খোলার প্রথম সপ্তাহে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা স্থগিতের আবেদনসহ কমপক্ষে আটটি আবেদনের ওপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে। এ ছাড়া জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানের রিভিউর শুনানি, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও মীর কাসেম আলীর আপিলের শুনানি হতে পারে। তা ছাড়া বিএনপির নিখোঁজ নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদকে খুঁজে বের করতে রুলের শুনানি অপেক্ষমাণ রয়েছে।
খালেদা জিয়ার মামলাগুলোর মধ্যে আছে পরোয়ানা স্থগিত, আদালত বদল এবং সাক্ষ্য গ্রহণের শুনানি, বড়পুকুরিয়া খনি দুর্নীতি মামলা বাতিল আবেদনের রুলের আদেশ, গ্যাটকো মামলার রায়, নাইকো মামলার রুলের নিষ্পত্তির আবেদন।
খালেদা জিয়ার মামলার নথি থেকে জানা যায়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদ্দারের অধীনে বিচারাধীন আছে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির না হওয়ায় খালেদা জিয়াসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দুটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি এ বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে মামলা দুটি অন্য কোনো আদালতে স্থানান্তর করতে হাইকোর্টে পৃথক দুটি আবেদন করেন খালেদা জিয়া। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আবেদন দুটি হাইকোর্টের বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চে শুনানির জন্য উত্থাপন করা হয়। পরে খালেদা জিয়া বিচারিক আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত চেয়ে পৃথক দুটি সম্পূরক আবেদন করেন। হাইকোর্ট এসব আবেদনের ওপর সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ শেষে ৩১ মার্চের পর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে, আগামী ৫ এপ্রিল বিশেষ জজ আদালত-৩-এ মামলা দুটিতে সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য আছে।
খনি দুর্নীতি মামলা বাতিলের আবেদনের রায়
দেশে জরুরি অবস্থার সময় ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা করে দুদক। শাহবাগ থানায় করা এ মামলায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতি হয়ে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির অনুমোদন দিয়ে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়েছিল খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। পরে এ মামলা দায়ের ও অনুমোদনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়।
এ আবেদনের শুনানি নিয়ে ২০০৮ সালের ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন। একই সঙ্গে মামলা কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। সম্প্রতি মামলাটি সচল করার জন্য রুলের চূড়ান্ত শুনানির উদ্যোগ নেয় দুদক। দুদকের আইনজীবীকে দুই কার্যদিবস শুনানি গ্রহণ করে ৫ মার্চ বিচারপতি মো. মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ১০ মার্চ রায়ের দিন ধার্য করেন।
গ্যাটকো মামলা
চট্টগ্রাম বন্দর ও কমলাপুরের টার্মিনাল কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে মেসার্স গ্লোবাল অ্যাগ্রো ট্রেড কোম্পানি লিমিটেডকে (গ্যাটকো) ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে রাষ্ট্রের কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকা ক্ষতির অভিযোগে খালেদা জিয়া ও তাঁর ছোট ছেলের প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনকে আসামি করে ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর মতিঝিল থানায় মামলা করে দুদক।
মামলায় অনুমোদনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের ১৫ জুলাই আদালত মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে এ রুল জারি করেন। এ ছাড়া এ মামলা জরুরি ক্ষমতা বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৭ সালে আলাদা একটি রিট আবেদন করা হয়। এ বিষয়ে জারি করা রুলে চূড়ান্ত শুনানির জন্য পৃথক আবেদন করে দুদক। শুনানির জন্য হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের বেঞ্চর কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
নাইকো মামলা
কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের ১০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতিসাধনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুদক। এ মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়ার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের ৯ জুলাই মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত এবং রুল জারি করেন হাইকোর্ট। ওই রুলের ওপর শুনানির জন্য দুদক আবেদন করেছে, যা হাইকোর্টের উল্লিখিত বেঞ্চের কার্যতালিকায় আছে।
কামারুজ্জামানের রিভিউ শুনানি
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড বহালের রায় পুনর্বিবেনার (রিভিউ) শুনানি ১ এপ্রিল থেকে শুরু হবে। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ তারিখ নির্ধারণ করা আছে।
সালাহ উদ্দিনকে হাজির করার বিষয় শুনানি
গত ১০ মার্চ রাত থেকে নিখোঁজ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ। ১২ মার্চ তাঁর স্ত্রী হাসিনা আহমেদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সালাহ উদ্দিন আহমেদকে খুঁজে বের করে আদালতের সামনে হাজির করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। পরে এ বিষয়ে ১৬ মার্চ চূড়ান্ত শুনানি শুরু হয়। ওই দিন শুনানি শেষ করতে না পারায় আদালত আগামী ৮ এপ্রিল পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।