খুলনায় সোনালী ব্যাংক খালিশপুর শাখার অসাধু কর্মকর্তাদের সহায়তায় ৮২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে গাজী জুট ট্রেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান। টাকার ভাগাভাগি নিয়ে ব্যাংকের মধ্যে ম্যানেজারের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির বিষয়টিও প্রকাশ পেয়েছে।

এ ব্যাপারে সোনালী ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) সরদার হাসিবুর রহমান বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, টাকা আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। থানা পুলিশের কাছে গেলে প্রতারণার টাকা আদায় করা কষ্টকর হয়ে পড়বে।

হাতাহাতির বিষয়টি স্বীকার করে সোনালী ব্যাংক খালিশপুর শাখার ম্যানেজার মফিদুল ইসলাম জানান, গাজী জুট ট্রেডার্স নামে পাট রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের এ শাখা থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে দীঘলিয়া উপজেলার দেবনগরের গুদামের পাট দেখিয়ে দুই কোটি টাকার ঋণ নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, এই প্রতিষ্ঠানের হিসাবে অতিরিক্ত ঋণ নেওয়া হয়েছে।

২০১৪ সালের ২০ মার্চ ওই পাট গুদামে আগুন লাগে। গুদামের পাট গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে বিমা করা ছিল। সে হিসাবে গাজী ট্রেডার্স ও সোনালী ব্যাংক খালিশপুর শাখা মোট দুই কোটি ৩৪ লাখ টাকার পাট পুড়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে এই ক্ষতিপূরণ দাবি করে। গত মার্চ মাসে সোনালী ব্যাংক খালিশপুর শাখার নামে ক্ষতিপূরণ বাবদ এক কোটি ৭২ লাখ টাকার দুটি চেক ইস্যু করে বিমা প্রতিষ্ঠানটি।

গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির খুলনার ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহ জাহাঙ্গীর আবেদ জানান, তাঁরা ক্ষতিপূরণ বাবদ এক কোটি ৭২ লাখ টাকার দুটি চেক সোনালী ব্যাংক খালিশপুর শাখার নামে দেন। এটি অ্যাকউন্টপেয়ি চেক, কোনো অ্যাকাউন্ট জমা হওয়ার কথা নয়। তাঁরা নিশ্চিত যে, চেকটি খালিশপুর শাখায় জমা হয়েছে। এই বিমা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার রেজাউল ইসলাম জানান, ব্যাংক ম্যানেজার এবং পার্টির অনুরোধে তাঁরা চেকটি হাতে হাতে দিয়েছিলেন।

সোনালী ব্যাংকের খালিশপুর শাখার ম্যানেজার মফিদুল ইসলাম জানান, বিমার ক্ষতিপূরণের টাকা তাঁদের ব্যাংকে জমা হয়েছিল। কিন্তু গাজী জুট ট্রেডার্স তাঁদের অগোচরে গত এপ্রিল মাসে কয়েক দফায় ৮২ লাখ টাকা উঠিয়ে নিয়ে গেছে। তিনি পরে বিষয়টি বুঝতে পেরে চলতি মাসে ৯০ লাখ টাকা উত্তোলনের সময় তা আটকে দেন। এ নিয়ে গাজী জুট ট্রেডার্সের মালিক জাহাঙ্গীর গাজী ব্যাংকের মধ্যে তাঁর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। সে ঘটনায় তিনি অসুস্থ হয়ে সাত দিন ক্লিনিকে ভর্তি ছিলেন।

বিষয়টি থানা পুলিশ বা দুর্নীতি দমন কমিশনকে জানিয়েছেন কি না জানতে চাইলে ম্যানেজার বলেন, তিনি বিষয়টি ডিজিএমসহ তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। তাঁরা থানা পুলিশের কাছে যাওয়ার অনুমতি দেননি। তিনি বলেন, ‘আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা যা বলেছেন, আমি তা-ই করেছি।’

ব্যাংকের ডিজিএম সরদার হাসিবুর রহমান জানান, গাজী জুট ট্রেডার্স সব টাকা ফেরত দেবে বলে মৌখিকভাবে কথা দিয়েছে।

সোনালী ব্যাংক খুলনা জোনের জেনারেল ম্যানেজার পরিতোষ কুমার তরুয়া বলেন, ‘সোনালী ব্যাংকের নামের চেকের টাকা কোনো অবস্থাতেই অন্য কোনো পার্টি তুলে নিতে পারে না। বিষয়টি ব্যাংক বিধিমালার পরিপন্থী কাজ। ঘটনাটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ব্যাংকটি ডিজিএম সরদার হাসিবুর রহমানের নিয়ন্ত্রণাধীন।’

এদিকে, ব্যাংকের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংক ম্যানেজারের সম্মতি ছাড়া এত টাকা উত্তোলন সম্ভব নয়। কারণ, ব্যাংকে এত নগদ টাকা থাকে না। এই সূত্র আরো জানায়, গাজী জুট ট্রেডার্স ছাড়া আমীর জুট ট্রেডার্স নামে একই মালিকের আরেকটি অ্য্যাকাউন্ট রয়েছে। এতেও কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর করা রয়েছে।

গাজী জুট ট্রেডার্সের দৌলতপুর কার্যালয়ে বেশ কিছুদিন গিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়। ব্যাংক ম্যানেজারের দেওয়া গাজী জুট ট্রেডার্সের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের খুলনা অঞ্চলের সচিব মো. আবদুল হামিদ জানান, গাজী জুট ট্রেডার্স বা তার সহযোগী দুটি প্রতিষ্ঠান কোথাও পাট রপ্তানি করেছে, এমন কোনো তথ্য তাঁর কাছে নেই। তিনি বলেন, পাট রপ্তানি করতে হলে তাঁদের কাছ থেকে সনদ নেওয়া বাধ্যতামূলক।

এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) খুলনার উপপরিচালক মো. আবদুল হাই জানান, বিমা কোম্পানি ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়েছিল ব্যাংকের ঋণ সমন্বয় করার জন্য। সেখানে টাকা সমন্বয় না করে প্রতারণা করে উঠিয়ে নেওয়ার ঘটনা দুর্নীতির পর্যায়ে পড়ে।