সাবেক এমপি বাহার ও তার মেয়ে সূচনার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

কুমিল্লায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৫ আগস্ট মামুন আহমেদ রাফসান নামে এক হোটেল কর্মচারী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহতের ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (২৭ মে) রাতে দায়ের করা এ মামলায় কুমিল্লা সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এবং তার মেয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তাহসিন বাহার সূচনাসহ ১৪৭ জনের নাম উল্লেখ করে ১০০ থেকে ১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।
মামলার বাদী মো. রানু মিয়া হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার তেঘরিয়া গ্রামের মো. ছালেক মিয়ার ছেলে এবং তিনি নিহত রাফসানের ভাই। আজ বুধবার মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিনুল ইসলাম।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত বছরের ৫ আগস্ট বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জেলার আদর্শ সদর উপজেলার ক্যান্টনমেন্ট ওভারব্রিজের নিচে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিল চলছিল। এ সময় তৎকালীন এমপি বাহার ও তার মেয়ে সূচনার হুকুমে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা পিস্তল, একনালা বন্দুক, শর্টগান, রাইফেল, হাতবোমা, ককটেলসহ দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। তারা এলোপাতাড়ি গুলি ও ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে। হাতবোমা ও ককটেল বিস্ফোরণসহ গুলিতে বেশ কয়েকজন আহত হয়। এ সময় আন্দোলনে অংশ নেওয়া ক্যান্টনমেন্ট মার্কেটের একটি হোটেলের কর্মচারী মামুন আহমেদ রাফসান (১৮) গুলিবিদ্ধ হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় সড়কে লুটিয়ে পড়েন। তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় ক্যান্টনমেন্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন।
মামলায় আলোচিত অপর আসামিরা হচ্ছেন—আদর্শ সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম টুটুল, সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাবলু, বুড়িচং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আখলাক হায়দার, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ সহিদ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম রিন্টুসহ বেশ কয়েকজন সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কিছু নেতাকর্মী।
মামলার বাদী মো. রানু মিয়া বলেন,’ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের দোসররা প্রকাশ্যে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করেছিল। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আমার ভাই নিহত হন।’ তিনি অবিলম্বে আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
বুধবার দুপুরে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. মহিনুল ইসলাম বলেন, ‘আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ মামুন হাসপাতালে মারা যাওয়ার পর তার স্বজনরা খবর পেয়ে মরদেহ হবিগঞ্জ নিয়ে দাফন করে। পরে পরিবার মামলা করতে আসেনি। সম্প্রতি সরকারি গেজেটে শহীদ তালিকায় ওই ব্যক্তির নাম আসায় পরিবারের পক্ষ তার ভাই বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। তদন্ত করে আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ওসি আরও বলেন, এ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলা, গুলিবর্ষণ ও হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে সাবেক এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় ১২টি মামলা দায়ের হয়েছে।