চট্টগ্রামে নির্বাচন নিয়ে সভায় মন্ত্রীরা!

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কৌশল নির্ধারণে সভা করেছে মহানগর উত্তর-দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল। আজ মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর জিইসি মোড়ের হোটেল পেনিনসুলায় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় যোগ দেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনসহ সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, প্রতি ও উপমন্ত্রী। সভায় যোগ দেন রাষ্ট্রের কয়েকজন আইন কর্মকর্তাও।
সভায় অন্য যাঁরা যোগ দেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চেীধুরী জাবেদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপমন্ত্রী বীর বাহাদুর, সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ, সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী, সংসদ সদস্য মাঈনুদ্দিন খান বাদল, দিদারুল আলম, শামসুল হক চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম বিএসসি, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কামাল উদ্দিন, মহানগর পিপি ফখরুদ্দিন, দ্রুতবিচার ট্রাইবুনালের পিপি আইয়ুব খান, মেয়র প্রার্থী আ জ ম নাসির উদ্দিন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আমিনুল ইসলামসহ বিভিন্ন স্তরের নেতা।
সভাস্থলে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষেধ থাকায় বাইরে দাঁড়িয়ে সভার উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে উত্তর এড়িয়ে যান কয়েকজন নেতা। ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘দলীয়ভাবে আমরা বসেছি, সভায় ওবায়দুল কাদের, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনসহ ১৪ দল একসাথে মিলিত হয়েছি। নির্বাচনকে আরো কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, সে লক্ষ্য নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। আমরা আশাবাদী, জয়ের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।’
জাসদ নেতা মাঈনুদ্দিন খান বাদল বলেন, ‘১৪ দল চট্টগ্রাম মহানগরীতে আ জ ম নাসিরের পক্ষে তাঁকে ভোটে নির্বাচিত করার জন্য সমর্থন দিয়েছে। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরাও সভায় ছিলেন। তবে মন্ত্রীরা কোন রুমে কে ছিলেন, তা আমি জানি না। এটা আমি বলতে পারব না। এটা কর্মিসভা ছিল না। এটি পরামর্শ সভা।’ সামনেই কর্মিসভা করা হবে বলেও জানান তিনি।
হোটেল পেনিনসুলা আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মালিকানাধীন চার তারকা হোটেল।
হোটেলে প্রবেশের সময় সীতাকুণ্ড থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য দিদারুল আলম বলেন, ‘দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করব। এ ছাড়া মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আমাদের দাওয়াত দিয়েছেন। মন্ত্রী হওয়ার পর তিনি প্রথম আমাদের নিয়ে দুপুরে একসাথে খাবেন। এমন দাওয়াতে আমরা এসেছি।’
নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক ইসহাক মিয়া বলেন, ‘আমি সভায় আসিনি। এমনি কথা বার্তা ছিল। সংগঠনের কথাবার্তা ছিল। এজন্য এসেছি। গেট টুগেদার হয়েছে। অন্য কোনো কথা বলা যাবে না। নো টক টুডে।’
সংসদ সদস্য এম এ লতিফ বলেন, ‘নাগরিক কমিটির প্রার্থী আ জ ম নাসিরকে নেত্রী সমর্থন দিয়েছেন। তাই তাঁর পক্ষে কাজ করতে দলের প্রতিটি নেতা-কর্মী ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাবে।
প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন চাইবে। নগরীর জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে আগামীর মেয়র হিসেবে তারা কাকে দেখতে চায়। আমরা শুধু আমাদের নেতাকে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম বলেন, ‘আজকে দাওয়াত দিয়েছে, ভেতরে গেলে বুঝতে পারব উদ্দেশ্য কী। সবাইকে দাওয়াত দিয়েছে ।আমরা এসেছি।’
এ ধরনের সভায় মন্ত্রীদের যোগ দিয়ে বক্তব্য রাখাকে বিএনপি সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থীর পক্ষ থেকে নির্বাচনী আচরণ বিধির লঙ্ঘন বলে অভিযোগ উঠেছে। উন্নয়ন আন্দোলন সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, সরকার সমর্থিত প্রার্থী হওয়ায় আইন প্রণেতা থেকে শুরু করে সবাই আচরণবিধি লঙ্ঘণের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন।
এদিকে দুপুরে চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলন রিটার্নিং অফিসারের কাছে আ জ ম নাসিরের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে আলাদা তিনটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এসব অভিযোগ ও মন্ত্রীদের নির্বাচনী সভায় বক্তব্য রাখা প্রসঙ্গে রিটার্নিং অফিসার আবদুল বাতেন বলেন, ‘যদি মন্ত্রী মহোদয়রা এমন দলীয় প্রোগামে আসেন। তারা কী বলেছেন, কী করেছেন, কোন ধরনের কথা হয়েছিল। শুধু শোনা কথার ওপর ধারণা করা যাবে না। আর যদি মন্ত্রী মহোদয় এ রকম করেন। আমার ধারণা যে মন্ত্রী মহোদয়র সম্মানিত মানুষ। তাঁরা আইন প্রণয়ন করেন। আইন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তাঁরা নিশ্চয় এমন কিছু করবেন না যা দুর্নীতি হয়।’
রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, এ পর্যন্ত মেয়র পদপ্রার্থী আ জ ম নাসির, এম মনজুর আলম ও সোলাইমান আলম শেঠ ছাড়াও ২৮ জন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।