গমের বাম্পার ফলন, কিন্তু দাম অর্ধেক

অনুকূল আবহাওয়ার কারণে চলতি মৌসুমে গমের বাম্পার ফলন পেয়েছেন পঞ্চগড়ের চাষিরা। কিন্তু তাঁদের মুখে হাসি নেই। কারণ, চলতি মৌসুমে সরকার এক হাজার ১০০ টাকা মণ দরে কৃষকদের কাছ থেকে গম কেনার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু পঞ্চগড়ের চাষিকে বিক্রি করতে হচ্ছে সাড়ে পাঁচশ থেকে ছয়শ টাকা মণ দরে। চাষিদের অভিযোগ, সরকার গম সংগ্রহ শুরু না করায় মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীদের কাছে কম দামে তাঁদের বাধ্য হয়ে ফসল বিক্রি করতে হচ্ছে।
তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আশা করছে, সরকার কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি গম সংগ্রহ শুরু করলে বাজার ঊর্ধ্বমুখী হবে। যদিও সরকারিভাবে কবে থেকে গম কেনা শুরু হবে এবং কী পরিমাণ গম চলতি মৌসুমে কেনা হবে, তার কোনো পরিপত্র এখনো হাতে পায়নি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়।
চলতি মৌসুমে পঞ্চগড় জেলায় ২৬ হাজার ১৪৫ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছে। গত মৌসুমে এ জেলায় ১৯ হাজার ৪০৫ হেক্টর জমিতে গমের চাষ হয়েছিল। চলতি মৌসুমে গমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৭ হাজার ৮৩০ টন। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের।
সদর উপজেলার ডুডুমারী এলাকার কৃষক মো. আনোয়ার হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, তিনি দুই বিঘা জমিতে গমের চাষ করেছেন। গত বছরের চেয়ে এবার ফলনও ভালো পেয়েছেন। এ বছর দুই বিঘা জমিতে গম হয়েছে প্রায় ১৪ মণ। বাজারে বিক্রি করেছেন ছয়শ টাকা মণ দরে।
আনোয়ার দাবি করেন, তাঁর গম চাষে খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকা। আর গম বিক্রি করেছেন আট হাজার ৪০০ টাকার। চাষাবাদ, কাটা-মাড়াই ও উৎপাদন পর্যন্ত এই তিন মাস বৃথা পরিশ্রম করেছেন বলে আক্ষেপ করেন এই কৃষক।
একই উপজেলার মাহানপাড়া এলাকার কৃষক মো. সোলেমান হক এ বছর এক একর জমিতে গম চাষ করেছেন। তিনি প্রতি মণ গম বিক্রি করেছেন ৬১০ টাকা দরে। অথচ গত বছর তিনি এ সময়ে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা মণ গম বিক্রি করেছিলেন।
একই ধরনের অভিযোগ করেছেন সদরের যুগিভিটা এলাকার শুকুর আলী ও মারুপাড়া এলাকার জসিম উদ্দিন। এ দুই কৃষক জানান, তাঁরা গত সপ্তাহে প্রতি মণ গম সাড়ে পাঁচশ টাকা দরে বিক্রি করেছেন।
দেবীগঞ্জ উপজেলার তিস্তাপাড়া গ্রামের কৃষক মো. আসলাম আলী জানান, বর্তমানে স্থানীয় বাজারগুলো ভালো গম সাড়ে পাঁচশ থেকে সাড়ে ছয়শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে গমের দাম এমন থাকলে কৃষক গম চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এস এম আশরাফ আলী এনটিভি অনলাইনকে জানান, গম চাষে কৃষকদের পরামর্শসহ উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। এ কারণে এ বছর গমের চাষাবাদ বেড়েছে। সরকারিভাবে গম সংগ্রহ শুরু না হওয়ায় বর্তমানে গমের দাম কিছুটা কম। তবে সংগ্রহ অভিযান শুরু হলে গমের দাম বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আবদুল কাদের এখন পর্যন্ত গম সংগ্রহ অভিযানের কোনো পরিপত্র পাননি। তবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সংগ্রহ অভিযান শুরু হবে বলে আশাবাদী তিনি।