রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রতিবাদে খুলনায় বিক্ষোভ

বাগেরহাটের রামপালে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বাতিলের দাবি জানিয়েছে খুলনা মহানগর বিএনপি। একই দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে খুলনা শাখার তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।
আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ দাবির কথা জানায় বিএনপি। অন্যদিকে বিক্ষোভ মিছিল শেষে নগরীর পিকচার প্যালেস মোড়ে সমাবেশ করেছে জাতীয় কমিটি।
খুলনা মহানগর বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক সামছুজ্জামান চঞ্চল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে পরিবেশ অধিদপ্তর এখনো পর্যন্ত ছাড়পত্র দেয়নি। প্রকল্প বিষয়ে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মতামত গ্রহণ করা হয়নি। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি প্রকৃতি সংরক্ষণশীল আইন ও নীতিমালা লঙ্ঘন করা হয়েছে। সরকার নিয়ম ভঙ্গ করে পরিবেশগত সমীক্ষা প্রণয়নের আগেই প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করে। এ ছাড়া যে সমীক্ষা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক বিবেচনা ও তথ্যের গোঁজামিলভিত্তিক। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একাধিক সেমিনারে সঠিক তথ্য ও যুক্তি তুলে ধরে বলা হয়েছে, সরকারের এই সমীক্ষা প্রতিবেদনটি বিজ্ঞানভিত্তিক নয়। রামপাল প্রকল্পের অর্থিক উপযোগিতাও নেতিবাচক।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, এ কাজে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের সাধারণ মানুষের বিপুল অঙ্কের অর্থের অপচয় ঘটবে। যার দায় বহন করতে হবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে। এ প্রকল্পে অর্থ সহায়তা দেবে ভারতের এক্সিম ব্যাংক। তাদের বিনিয়োগ নীতি অনুযায়ী তারা সেই সব প্রকল্পে অর্থায়ন করে যেখানে ভারতের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সম্পৃক্ত থাকে। অর্থাৎ এ প্রকল্পের মাধ্যমে ভারতের স্বার্থকেই সংরক্ষণ করা হবে। সর্বশেষ আশঙ্কার বিষয় হলো, এ প্রকল্পে উন্নতমানের কয়লা ব্যবহার করা হবে বলে বলা হলেও ভারতের যে কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে, তাতে নিম্ন মানের কয়লা ব্যবহারের প্রযুক্তি সক্ষমতা থাকার কথা বলা হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ‘পরিবেশগত বিপর্যয় ও আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ। সুন্দরনের অস্তিত্ব শুধু হুমকির মুখেই পড়বে না, ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবে বিশ্ব ঐতিহ্য এই ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল।’
বিবৃতিদাতারা হলেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এম নুরুল ইসলাম দাদু ভাই, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, সাধারণ সম্পাদক ও খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুজ্জামান মনি, সাহারুজ্জামান মোর্তজা, কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম, সৈয়দা নার্গিস আলী, শেখ মোশারফ হোসেন, মীর কায়সেদ আলী, জাফরউল্লাহ খান সাচ্চু, সিরাজুল ইসলাম মেঝো ভাই, জলিল খান কালাম, ফখরুল আলম, ফজলে হালিম লিটন, অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, শেখ আমজাদ হোসেন, অধ্যাপক আরিফুজ্জামান অপু, সিরাজুল হক নান্নু, আসাদুজ্জামান মুরাদ, এস এম আরিফুর রহমান মিঠু।
জাতীয় কমিটির বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ
রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে চূড়ান্ত চুক্তি বাতিলের দাবিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির খুলনা শাখা।
সংগঠনের খুলনার শাখার সদস্যসচিব শেখ মফিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই কর্মসূচির কথা জানানো হয় ।
নগরীর পিকচার প্যালেস মোড়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘সরকার বিশ্বখ্যাত ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনকে ধ্বংস করতে ভারতের কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে। সুন্দরবন থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হচ্ছে, যার ফলে সুন্দরবনকে আর বাঁচানো যাবে না। কেননা পরিবেশবিদরা বলছেন, বনভূমি থেকে কমপক্ষে ২৫ কিলোমিটার দূরত্ব থাকতে হবে। ওই কারণে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কোনো ছাড়পত্র প্রদান করা হয়নি। তাহলে কার স্বার্থে এই চুক্তি?
সমাবেশে নেতারা আরো বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদনের বহু বিকল্প আছে, কিন্তু সুন্দরবনের কোনো বিকল্প নেই। সরকার একদিকে পরিবেশবিদ এবং তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির নেতাদের সঙ্গে আলোচনা ঈদের আগে শুরু করেছে, যার সমাপ্তি ঘটেনি। এর মাঝেই সরকার গত মঙ্গলবার রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প চুক্তি চূড়ান্ত করেছে, যা সম্পূর্ণ অবৈধ, অযৌক্তিক, অনৈতিক।’
জাতীয় কমিটির খুলনা শাখার সদস্য সচিব ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দেলোয়ার উদ্দিন দিলুর সভাপতিত্বে ও কমিউনিস্ট পার্টির শহর শাখার সভাপতি এইচ এম শাহাদতের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শেখ মফিদুল ইসলাম, জেলা নেতা মো. খলিলুর রহমান, খায়রুল বাশার, আলমগীর হোসেন, জসিম গাজী, কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুতপা বেদজ্ঞ, জেলা নেতা রুস্তম আলী হাওলাদার, রঙ্গলাল মৃধা, আব্দুর রহমান, বাসদ জেলা সমন্বয়ক জনার্দন দত্ত নান্টু, প্রলয় মজুমদার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য মনিরুল হক বাচ্চু, জেলা নেতা গোলাম মোস্তফা, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের জেলা সম্পাদক ডা. সমরেশ রায়, জেলা নেতা মোস্তফা খালিদ খসরু, কাজী দেলোয়ার হোসেন, বাসদ (মাকর্সবাদী) জেলা নেতা রুহুল আমিন এবং সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে বক্তৃতা করেন সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির খুলনা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ভাস্কর সেখ সাদী ভূঁঞা প্রমুখ।