গাংনীর মেয়রকে নিয়ে ফেসবুকে আপত্তিকর মন্তব্য, পাল্টাপাল্টি কাণ্ড

মেহেরপুরের গাংনী পৌরসভার মেয়র আশরাফুল ইসলাম ভান্ডার, তাঁর পরিবারের সদস্য ও যুব মহিলা লীগের কয়েকজন নেত্রীকে নিয়ে ফেসবুকে আপত্তিকর মন্তব্য করায় মামলা হয়েছে। এতে মেহেরপুর জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের লাইন সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মনিরকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া তিনজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় শনিবার বিকেলে গাংনী থানায় মামলা করেন মেয়রের স্ত্রী গাংনী উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী শাহানা ইসলাম।
এদিকে মামলার আসামি মনিরুল ইসলাম মনির গাংনীর বাসভবনের পাশ থেকে শনিবার গভীর রাতে চারটি বোমা সদৃশ্য বস্তু ও ২০টি ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। মনির দাবি, কেউ তাঁর ফেসবুকের আইডি হ্যাক করে আপত্তিকর ছবিসহ লেখা পোস্ট করেছে।
ফেসবুকে আপত্তিকর মন্তব্য
যুবলীগ নেতা গাংনীর মেয়র আশরাফুল ইসলাম ভান্ডার এনটিভি অনলাইনকে জানান, গত ১৭ মার্চ তিনি, তাঁর স্ত্রী, দুই মেয়ে ও যুব মহিলা লীগের নেত্রীরা গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় গিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে এই ছবি তিনি নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেন। কিছুদিন আগে মনি তাঁর ওই ছবি নিজের ফেসবুকে পোস্ট করে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। পরে ওই মন্তব্যে তার অনুসারী আরো কয়েকজন আপত্তিকর মন্তব্য পোস্ট করেন।
এ ঘটনায় শনিবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়ে মৌখিক অভিযোগ করেন শাহানা ইসলামসহ তাঁর কর্মীরা। পুলিশ সুপারের কাছে সুবিচার দাবি করেন তিনি। পরে গাংনী ফিরে থানায় হাজির হয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে শাহানা ইসলাম মামলা দায়ের করেন। ছবি পোস্টকারী ও এতে আপত্তিকর মন্তব্যকারী কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।
গাংনী থানার দ্বিতীয় কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মনিরুজ্জামান জানান, এসআই শংকর কুমার ঘোষকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাড়ির পাশে বোমা
মেহেরপুর ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দিন জানান, মনির বাড়িতে বোমা ও ইয়াবা রয়েছে বলে মোবাইল ফোনে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ডিবিকে জানায়। পরে ওই বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় বাড়ির প্রাচীরের বাইরের দিকে একটি ব্যাগে ঝোলানো অবস্থায় চারটি বোমা সদৃশ্য বস্তু ও ২০টি ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। মনিকে ফাঁসাতে কেউ এগুলো রাখতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে ডিবি। অভিযানের পর থেকেই তথ্যদাতার মোবাইল ফোনটি বন্ধ রয়েছে। এগুলো রাখার পেছনে কারা রয়েছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে বলে জানান ডিবির ওসি।
মনির সংবাদ সম্মেলন
মেহেরপুর জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের লাইন সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মনি রোববার দুপুরে নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন। লিখিত বক্তব্যে মনি বলেন, গাংনী পৌর এলাকার বিভিন্ন সড়কে মেয়রের লোকজন চাঁদাবাজি করছে। এতে বাস চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। এর প্রতিবাদে তিনি মিটিং করায় মেয়র ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন। যার জের ধরে তাঁর ফেসবুক আইডি হ্যাক করে কিছু মেয়ের ছবি দিয়ে চক্রান্তের চেষ্টা চলছে।
মনি দাবি করেন, শনিবার রাতে মেহেরপুর জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নে মিটিংয়ে যোগ দেন তিনি। এ সুযোগে কয়েকজন ব্যক্তি তাঁর বাড়ির প্রাচীরের সঙ্গে বোমা সদৃশ্য বস্তু ও ইয়াবা রেখে ডিবিকে খবর দেয়। ডিবি পুলিশের একটি দল সেগুলো উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এর মধ্য দিয়ে তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানের অপচেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু এই বোমা সদৃশ্য বস্তু ও ইয়াবা কারা রেখেছিল তাদের খুঁজে বের করে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক সাজা দাবি করেন মনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গাংনীর শ্রমিক নেতারা।