মেহেরপুরে বাসে ছাত্রীর শ্লীলতাহানি, সড়ক অবরোধ

মেহেরপুর সরকারি কলেজের এক ছাত্রীকে লাঞ্ছিত ও শ্লীলতাহানি করেছে যাত্রীবাহী লোকাল বাসের এক সুপারভাইজার। এর প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে কলেজের সামনের সড়ক ঘণ্টাব্যাপী অবরোধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা।
এ সময় মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। অভিযুক্ত সুপারভাইজার রানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়।
পরে কুষ্টিয়া থেকে নাজ পরিবহন নামের একটি লোকাল বাস কলেজের সামনে পৌঁছালে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা বাসটি ভাঙচুর করে। বাস ভাঙচুরের প্রতিবাদে চালক বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে সড়কের ওপর বাস রেখে ১০ মিনিট পাল্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে।
এ ঘটনায় দুপুরে উভয় পক্ষের লোকজন, পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক শেষে অভিযুক্ত সুপারভাইজারকে ওই ছাত্রীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীরা জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি থেকে সরকারি কলেজের এক ছাত্রী কলেজের যাওয়ার উদ্দেশে একটি লোকাল বাসে ওঠে। এ সময় স্টুডেন্ট ভাড়া (অর্ধেক ভাড়া) নিয়ে বাসের সুপারভাইজারের সঙ্গে ওই ছাত্রীর বাগবিতণ্ডা হয়। বাসের সুপারভাইজার ওই ছাত্রীকে লাঞ্ছিত ও শ্লীলতাহানি করে। পরে ছাত্রী কলেজে পৌঁছে তার সহপাঠীদের জানালে তারা ফুঁসে ওঠে। কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কুদরত ই খুদা রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানার নেতৃত্বে কলেজের শিক্ষার্থীরা কলেজের সামনে সড়ক অবরোধ করে। এ সময় মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কে ঘণ্টাব্যাপী যান চলাচল বন্ধ থাকে।
খবর পেয়ে মেহেরপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্ব পুলিশের একটি দল, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বারিকুল ইসলাম লিজন, জেলা মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের এবং লাঞ্ছনার শিকার ছাত্রীর অভিযোগ শুনে অভিযুক্ত সুপারভাইজারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে বেলা ১১টার দিকে তারা অবরোধ তুলে নেয়।
অবরোধ শেষে কুষ্টিয়া থেকে ফিরে যাওয়া নাজ পরিবহনের একটি লোকাল বাস কলেজের সামনে পৌঁছালে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা তা ভাঙচুর করে। ওদিকে ওই বাসটিকে ভাঙচুরের প্রতিবাদে বাসটি বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে সড়কের ওপর রেখে পাল্টা ১০ মিনিট সড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে পুলিশ ও শ্রমিক নেতাদের হস্তক্ষেপে বাসটি সড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
দুপুর ১টার দিকে মেহেরপুর পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে অভিযুক্ত সুপারভাইজার রানাকে ওই ছাত্রীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে সেজন্য শ্রমিক নেতাদের মাধ্যমে সব হেলপার ও সুপারভাইজারকে সতর্ক করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহমারুজ্জামানের সভাপতিত্বে বৈঠকে অংশ নেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক খাইরুল হাসান, মেহেরপুর সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল আমিন, সহকারী পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রসুল, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বারিকুল ইসলাম লিজন, কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কুদরত ই খুদা রুবেল, জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান, ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক রেজাউল করিম।
অপরদিকে দুপুর ২টার দিকে লাঞ্ছনার শিকার ওই ছাত্রী অপমান সহ্য করতে না পেরে বার বার মূর্চ্ছা গেলে তাকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মেহেরপুরের পুলিশ সুপার আহমারুজ্জামান বলেন, সম্মিলিত বৈঠকে অভিযুক্ত সুপারভাইজারকে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ভবিষ্যতে এই ধরনের আচরণ যাতে কোনো মোটরশ্রমিক না করে সে বিষয়েও সতর্ক করে দেওয়া হয়।