আদালতের নিষেধাজ্ঞা ভেঙে জমি দখল, আহত ১৩

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার গাড়াডোব গ্রামের রাইচ মিলপাড়ায় আদালতের স্থগিতাদেশ ভেঙে জমি দখলের ঘটনা ঘটেছে। জমিদখলকে কেন্দ্র করে ওই হামলায় একই পরিবারের মহিলাসহ ১৩ জন আহত হয়েছে বলে অভিযোগ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে।
বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে বাড়ির মালিক নগদ টাকাসহ চার লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুটের অভিযোগ তুললে দখলদারীরা তা অস্বীকার করেছে।
হামলায় আহতরা হলো বেল্টু হোসেন,কাউসার আলী,সোনিয়া খাতুন, নাসিমা খাতুন, তাহের আলী, মমতাজ বেগম, নাজির হোসেন, নাইম হোসেন, ইয়াকুব আলী, নাজমিন খাতুন, নাসিরুল ইসলাম, মাজেদা খাতুন এবং আছিয়া খাতুন। এদের মধ্যে প্রথম সাতজন গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, রাইস মিলপাড়ার আজগর আলীর শরিকদের (ছেলে, মেয়ে এবং স্ত্রীর) দখলে থাকা ৭ শতক জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আজগর আলীর ছেলেদের সাথে একই গ্রামের প্রতিবেশী আব্দুল খালেকের বিরোধ চলে আসছে। সেই বিরোধের জের ধরে আজগর আলীর ছেলেরা দাবি করেন ৭ শতকের মধ্যে সাড়ে ৩ শতক জমি তার বাবা আব্দুল খালেকের কাছে বিক্রি করেন। অন্যদিকে আব্দুল খালেক ও তার ছেলেরা দাবি করেন তাঁরা ৭ শতক কিনেছেন।
বিষয়টি নিয়ে কয়েকদিন আগে গ্রামে একটি সালিশ বৈঠক হয়। সালিশে বিষয়টি মীমাংসা না হলে আজগর আলীর ছেলে ফিরোজ আলী ও আক্কাস আলী মেহেরপুর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৪ ধারা চেয়ে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। সেই অভিযোগ অনুযায়ী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট গত ২৭ জুলাই ওই জমির ওপর ইনজেনশন অথবা স্থগিতাদেশ জারি করে গাংনী থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।
কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার সকালে আদালতের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে আব্দুল খালেক, তাঁর ছেলে শরিফুল ইসলাম,শাহিন,সদর আলী এবং শাহাজাহানের নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের একদল দুর্বৃত্ত দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে ওই জমি দখল করতে যায়। এ সময় ফিরোজ আলী ও তাঁর পরিবারের লোকজন দখলকারীদের বাধা দিলে তাদের ওপর হামলা চালায়।
হামলায় ফিরোজ আলীর পরিবারের মহিলাসহ ১৩ জন আহত হয়। এ সময় হামলাকারীরা ওই জমির দলিল নেওয়ার জন্য ফিরোজের বসতঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে তছনছ করে। হামলাকারীরা চলে গেলে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
খবর পেয়ে গাংনী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শহিদুল ইসলাম এবং জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হামলার নমুনা সংগ্রহ করেছেন।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক কর্মকর্তা ডা. আনোয়ারুল হক বলেন, জমি নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় গাড়াডোব গ্রামের মহিলাসহ সাতজন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন।
ওদিকে ঘটনার পর ফিরোজ আলী জানান, আব্দুল খালেক এবং তাঁর ছেলেদের নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত জমিদখল করতে গিয়ে তার বাড়ি ও পরিবারের লোকজনের ওপর হামলা চালিয়ে জখম করেছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার সময় তার ঘরে থাকা ব্যবসার নগদ দুই লাখ টাকা,স্বর্ণালংকারসহ চার লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করেছে হামলাকারীরা। ফিরোজ আলী আরো বলেন, ‘এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।’
তবে অভিযুক্ত আব্দুল খালেকের ছেলে শরিফুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে জানান, আদালত যে ওই জমির ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেছেন তা তিনি জানতেন না।
ক্রয়কৃত জমিতে ঘর তৈরির জন্য শ্রমিক নিয়ে গিয়েছিলেন। ওইসময়ে ফিরোজ আলীর লোকজন বাধা দিলে তাদের সাথে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। তবে নগদ টাকাসহ স্বর্ণালংকার লুটের বিষয়টি মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।