‘মুজিবনগর সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ঘোষণা দিয়েছিল’

‘মুজিবনগর সরকার বাংলাদেশে আসার আগেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ঘোষণা দিয়েছিল। তার ধারাবাহিকতায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুও হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে স্বাধীন বাংলার বুকে যুদ্ধাপরাধীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে লালন পালন শুরু হয়।’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন এ কথা বলেছেন।
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় জুবেরী ভবনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। অধ্যাপক রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ ফায়েকউজ্জামান, রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি আনন্দ কুমার সাহা প্রমুখ।
আলোচনা সভায় মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের পরই নতুন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে রাষ্ট্রের দায়মুক্তির পালা।’
ইতিহাসবিদ ও গবেষক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘১৭ এপ্রিলের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ১০ এপ্রিল। এর মধ্যে আমাদের পরবর্তীকালের সংবিধানের ভিত্তি নিহিত। মুজিবনগর সরকারের আসল নাম হচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এত অল্প দিনের মধ্যে কোনো প্রবাসী সরকার গঠিত হয়নি। এটা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। বাংলাদেশ সরকারের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হচ্ছে, পৃথিবীতে যতগুলো দেশ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।’
শিক্ষক সমিতির আয়োজনে সভায় মুনতাসীর মামুন আরো বলেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষণাটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিষয়। যেদিন স্বাধীতার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল ওই দিনটি হচ্ছে বাংলাদেশের আত্মা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাকে কোনোভাবেই নাকচ করা যায় না, যাবে না। সুতরাং আমাদের শুরুটা ওইভাবে, যেভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকার গঠনের পরিকল্পনা করে গিয়েছিলেন। এটা আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়, এর একটা ধারাবাহিকতা আছে। যার কারণে এই সরকারকে তখন কেউ নাকচ করতে পারেনি। আর পৃথিবীতে কোনো সরকার এত কম সময়ে একটা যুদ্ধে জয়লাভ করতে পারেনি। যেটা বাংলাদেশ সরকার পেরেছে।’
অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন আলোচনা সভায় উপস্থিতদের জানান, একাত্তর-পরবর্তী সময়ের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের যে ধারা শুরু হয়েছিল, দেশে এখনো তা অব্যাহত আছে। আমার গবেষণায় আমি দেখেছি, ৫৪ পর থেকে যতগুলো সরকার হয়েছে, যখন মধ্যপন্থী ও মৃদু বাম দলগুলো যখন জোট করেছে, তখন বাংলাদেশের জিডিপি বৃদ্ধি পেয়েছে, উন্নয়ন হয়েছে। যখনই ডানপন্থী ও চরম ডান শাসন করেছে তখন জিডিপির অবন্নতি হয়েছে এবং উন্নয়নের ধারা কমে গেছে। সুতরাং ৪৯ থেকে এখনো আমাদের জাতীয়তার ব্যাপারটি পরিষ্কার হয়নি। হলে আজকে খালেদা জিয়া বা বিএনপির জন্য এত লোক থাকে না।
আলোচনা সভায় মুনতাসীর মামুন আরো বলেন, ‘৩০ ভাগ লোক আজকে বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী। আগেও তাই ছিল। এবং এটা লড়াই করেই আমরা জিতেছি। সুতরাং ইতিহাসের ধারা বলে আমাদের জিততে হবেই। সেকুলার ডেমোক্রেসি ছাড়া এ দেশ টিকবে না এবং মধ্যপন্থী ও মৃদু বাম দলগুলো ছাড়া এদেশ এগিয়ে যেতে পারবে না।’