মাগুরায় ছিনতাই হওয়া টাকা উদ্ধার নিয়ে তদন্ত, ধূম্রজাল

মাগুরা জেলা শহর থেকে ছিনতাই হওয়া দুই ব্যবসায়ীর চার লাখ ১০ হাজার টাকার হদিস মেলেনি। ওই টাকা উদ্ধার হওয়ার পর আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে অভিযানে অংশ নেওয়া পুলিশ সদস্যরা টাকা উদ্ধারের কথা অস্বীকার করেছেন। এতে টাকা উদ্ধার নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।
পুলিশ জানায়, উল্লিখিত টাকা উদ্ধারের পর আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হলে আজ বুধবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ঝিনাইদহ সদর থানায় অভিযানে অংশ নেওয়া দুই উপপরিদর্শকসহ একাধিক পুলিশ সদস্য, আটক হওয়া দুই আসামি ও ভুক্তোভোগী দুই ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। খুলনা রেঞ্জ পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হাবিবুর রহমান অভিযোগের তদন্ত করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ ও সদর সার্কেল এএসপি গোপীনাথ কানজি লাল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে মাগুরা শহরের ইসলামী ব্যাংক শাখা থেকে চার লাখ টাকা উত্তোলন করে মোটরসাইকেলে ঝিনাইদহের দুই ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান ও সাইদুর রহমান সোহাগ বাড়ি ফিরছিলেন। পথে ঝিনাইদহ-মাগুরা সড়কের মাগুরা জেলগেটের সামনে থেকে পাঁচ-ছয়জন ব্যক্তি গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাঁদের আটক করে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। মাইক্রোবাসের ভেতরে ওই দুই ব্যবসায়ীকে মারধর করে এবং ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে তাঁদের কাছে থাকা চার লাখ ১০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। বিষয়টি দ্রুততম সময়ে মাগুরা পুলিশের পক্ষ থেকে ঝিনাইদহ পুলিশকে জানানো হয়। দুপুর সোয়া ৩টার দিকে ঝিনাইদহ জেলা শহরের আরাপপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি মাইক্রোবাসসহ ছিনতাইকারী দলের দুই সদস্যকে আটক করে পুলিশ। এ সময় ছিনতাইকারী দলের অন্য সদস্যরা পালিয়ে যায়।
অভিযোগ ওঠে, ছিনতাই করা টাকা মাইক্রোবাসে ছিল এবং অভিযানে অংশ নেওয়া এক উপপরিদর্শক (এসআই) ওই টাকা উদ্ধার করেছেন। অথচ ঘটনা অস্বীকার করা হচ্ছে।
উল্লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে অতিরিক্ত ডিআইজি হাবিবুর রহমান আজ সকালে ঝিনাইদহ থানায় আসেন। তিনি সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বিষয়টি জানার চেষ্টা করেন।
পরে অতিরিক্ত ডিআইজি হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভিকটিম ও আটক দুই আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি।
পালিয়ে যাওয়া অন্য চারজন আসামি ছিনতাই করা টাকা নিয়ে গেছে বলে ধারণা করছি।’
ছিনতাই হওয়া টাকা উদ্ধার করে আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযানে অংশ নেওয়া ঝিনাইদহ পুলিশ লাইনসের যানবাহন বিভাগের এসআই মো. হাবিবুর রহমান।
এসআই হাবিবুর রহমান জানান, অতিরিক্ত ডিআইজি হাবিবুর রহমান তাঁকে টাকা উদ্ধারের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এ ছাড়া অভিযান পরিচালনাকারী ঝিনাইদহ সদর থানার এসআই আলাউদ্দিনসহ কয়েকজন কনস্টেবলকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ছিনতাই হওয়া টাকা উদ্ধার করা যায়নি বলে তদন্তকালে তাঁরা দাবি করেছেন।
মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজমল হুদা জানান, তদন্তকালে মাগুরা থেকে সকালেই ভিকটিম ও আটক করা দুই আসামিকে ঝিনাইদহ থানায় নেওয়া হয়। টাকা উদ্ধার করা নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে।
মাগুরা জেলার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি, সার্কেল) সুদর্শন কুমার ভৌমিক জানান, প্রকৃত সত্য উদঘাটনে তদন্ত চলছে। মাগুরা থানায় ঘটনার দিন রাতেই দ্রুত বিচার আইনে ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আটক হওয়া দুই ব্যক্তিসহ মামলায় মোট ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে।
আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ঝিনাইদহ সদর থানায় সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় পুলিশ। পরে অতিরিক্ত রেঞ্জ ডিআইজি তদন্ত শেষ করে থানা থেকে বের হওয়ার সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।