মন্দির তত্ত্বাবধায়কের ওপর হামলায় মামলা, গ্রেপ্তার ১

নরসিংদীর রঘুনাথপুর শ্রীশ্রী কালীমন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক চিত্তরঞ্জন আঢ্যকে চাপাতি দিয়ে কোপানোর ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। হামলার কারণ হিসেবে ব্যক্তিগত শত্রুতার কথা জানিয়েছেন বাদী।
গতকাল বৃহস্পতিবার আহত চিত্তরঞ্জন বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে মাধবদী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এতে পুলিশ ফিরোজ নামের একজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে।
ঘটনার পর জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) দায় স্বীকার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে সংখ্যালঘু পরিবারটি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী সাইট ইন্টেলিজেন্স আইএসের দায় স্বীকারের বিষয়টি জানিয়েছে।
তবে পুলিশ ও আহতের পরিবারের দাবি, এ ঘটনায় কোনো আইএস জড়িত নয়। এলাকার কতিপয় ব্যক্তির সঙ্গে বিরোধই হামলার মূল কারণ।
গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে সদর উপজেলার মেহেরপাড়া ইউনিয়নের রঘুনাথপুর শ্রীশ্রী কালীমন্দিরসংলগ্ন নিজ মুদি দোকানে চিত্তরঞ্জন আঢ্যকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে জখম করে তিন মুখোশধারী দুর্বৃত্ত। এতে তাঁর মাথায়, ঘাড়ে, গলায়, পেটে ও কবজিতে মারাত্মক জখম হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে পাঁচদোনার একটি হাসপাতালে ও পরে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আহত চিত্তরঞ্জন মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, নাহিদা বেগম ওরফে নাইস খান নামে এক নারীকে তিনি বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন। এই নিয়ে নাহিদার দেবর সুমন ও ননদের স্বামী ফিরোজের সঙ্গে চিত্তরঞ্জনের দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিস বসলেও সমাধান হয়নি। এরই জের ধরে ফিরোজ ও সুমন এই হামলা চালাতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
এজাহারে আরো বলা হয়, মুদি দোকানের পাশাপাশি চিত্তরঞ্জনের লেগুনা গাড়ির ব্যবসা রয়েছে। গত বছরের ২৮ আগস্ট তাঁর একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ে কবীর মিয়া নামের গাড়িচালক নিহত হন। কবীরের স্ত্রী ও তিন বছরের একটি ছেলে রয়েছে। কবীরের মৃত্যুর পর থেকে তাঁর পরিবারটিকে নানাভাবে সাহায্য করতেন চিত্তরঞ্জন। কবীরের স্ত্রী নাহিদা বেগম ওরফে নাইস খানের সঙ্গে তাঁদের পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই সম্পর্ককে কেন্দ্র করে নিহত কবীরের ভাই-বোন ও ভগ্নিপতির সঙ্গে চিত্তরঞ্জনের শত্রুতা তৈরি হয়। তাঁরা বিভিন্ন সময়ে চিত্তরঞ্জনকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছিলেন। কয়েক দিন আগে চিত্তরঞ্জনকে অপহরণেরও চেষ্টা চালান।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মাধবদী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তানভীর আহমেদ বলেন, ঘটনার পর আটক দুই সন্দেহভাজনের মধ্যে ঘটনার সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় হাবিব নামের এক যুবককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অপর সন্দেহভাজন ফিরোজকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি চিত্তরঞ্জনের সঙ্গে তাঁর বিরোধের কথা স্বীকার করলেও হামলার কথা অস্বীকার করেছেন।
আহত চিত্তরঞ্জনের স্ত্রী চঞ্চলা আঢ্য সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের গাড়ির ব্যবসা রয়েছে। গত বছর দুর্ঘটনায় নিহত হন আমাদের লেগুনার চালক কবীর। এর পর থেকে তাঁর স্ত্রী নাইস খানকে বিভিন্ন সময় সাহায্য-সহযোগিতা করতেন আমার স্বামী। এতে করে দুই পরিবারের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক তৈরি হয়। কিন্তু কবীরের ভাইবোনেরা বিষয়টিকে পছন্দ করতেন না। এই নিয়ে আমাদের সঙ্গে নিহত কবীরের ভাইবোনের দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।’
মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইলিয়াস বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে আইএস জড়িত থাকার কোনো আলামত এখনো পাওয়া যায়নি। তারপরও যেহেতু আইএস দায় স্বীকার করেছে, তাই বিষয়টিকে উড়িয়ে দিচ্ছি না। মূলত দুটি বিষয়কে সামনে রেখেই তদন্তের কাজ চলছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ব্যক্তিগত বিরোধ।’ তিনি আরো বলেন, এরই মধ্যে গ্রেপ্তার ফিরোজ চিত্তরঞ্জনের সঙ্গে বিরোধের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।