পুলিশের আশ্বাসে শ্রীপুরে ব্যবসায়ীদের আন্দোলন স্থগিত

গাজীপুরে শ্রীপুর উপজেলার বরমী বাজারের তিন ব্যবসায়ীর মুক্তিসহ পুলিশের দায়ের করা দুটি মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আজ দ্বিতীয় দিনের মতো দোকানপাট বন্ধ রেখে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ব্যবসায়ীরা। একপর্যায়ে দুপুর থেকে ব্যবসায়ীরা আমরণ অনশন শুরু করেন। এ সময় গাজীপুর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ব্যবসায়ীদের হয়রানি না করার প্রতিশ্রুতি দিলে ব্যবসায়ীরা তাঁদের কর্মসূচি স্থগিত করেন।
বরমী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি অহিদুল হক ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন মোড়লসহ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালতের নামে কিছুসংখ্যক পুলিশের চাঁদাবাজি ও হয়রানি বন্ধ এবং আটক তিন ব্যবসায়ীকে মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে গতকাল শুক্রবার থেকে বরমী বাজারে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু করেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
শনিবার দুপুরে ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিল শেষে তাৎক্ষণিক আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে দুপুর ১টা থেকে তাঁরা স্থানীয় পল্টন মোড়ে আমরণ অনশন শুরু করেন।
কর্মসূচি চলাকালে গাজীপুর জেলা ডিবি পুলিশের ওসি আমির হোসেন মুঠোফোনে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাউকে হয়রানি না করার প্রতিশ্রুতি দেন। পুলিশ কর্মকর্তার এ আশ্বাস পেয়ে আন্দোলনরত ব্যবসায়ীরা তাঁদের কর্মসূচি স্থগিত করেন।
ব্যবসায়ী নেতারা জানান, আগামী দু-একদিনের মধ্যে ব্যবসায়ীদের দাবি পূরণ না হলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধসহ আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
বণিক সমিতির সভাপতি অহিদুল হক ভূঁইয়া দাবি করেন, শ্রীপুর উপজেলার বন্দরনগরী হিসেবে পরিচিত বরমী বাজারে সহস্রাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীরা প্রায়ই নানা মিথ্যা অজুহাতে পুলিশের হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
গাজীপুর জেলা ডিবি পুলিশের কিছু কিছু সদস্য মাদকসেবী ও দাগি আসামিদের সোর্স বানিয়ে ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষকে অযথা হয়রানি করছেন ও অবৈধভাবে অর্থ আদায় করছেন। সম্প্রতি তাঁদের অত্যাচারে ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ করেন অহিদুল হক ভূঁইয়া।
এ ব্যাপারে গাজীপুর জেলা ডিবি পুলিশের ওসি আমির হোসেন জানান, মামলা ও জামিনের বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার। পুলিশের ওপর যারা হামলা করেছে তারা ব্যবসায়ীদের কেউ নয়। কিছু মাদকসেবী ও চিহ্নিত অপরাধী ব্যবসায়ীদের মধ্যে ঢুকে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। তবে অযথা কোনো ব্যবসায়ীকে হয়রানি করা হবে না।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে সাদা পোশাকে জেলা ডিবি পুলিশের চার সদস্য বরমী বাজারের আমীর ট্রেডার্স থেকে পলিথিন জব্দ করেন এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দণ্ড দেওয়ার কথা বলে দোকান মালিককে ভয় দেখান। এ সময় বাজারের ব্যবসায়ীরা নির্বাহী হাকিমবিহীন ভ্রাম্যমাণ আদালতের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এ নিয়ে ডিবি পুলিশের সঙ্গে ব্যবসায়ীসহ স্থানীয়দের বাকবিতণ্ডা হয়। দুই পক্ষের বাকবিতণ্ডার সময় ইটের আঘাতে ইয়াসিন (৩৬) নামে ডিবি পুলিশের এক সদস্য আহত হন।
পরে ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা ডিবি পুলিশের ওই চার সদস্যকে বরমী বাজার বণিক সমিতির কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরুদ্ধ পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার ও ঘটনাস্থল থেকে তিন ব্যবসায়ীকে আটক করে।
এ ঘটনায় আটক তিন ব্যবসায়ীসহ দেড় শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে শ্রীপুর মডেল থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করে পুলিশ। এ নিয়ে ব্যবসায়ীসহ স্থানীয়দের মাঝে অসন্তোষ দেখা দেয়। এর জের ধরে পুলিশি হয়রানি বন্ধ, আটক ব্যবসায়ীদের মুক্তি এবং দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে শুক্রবার থেকে ব্যবসায়ীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটসহ আন্দোলনের নানা কর্মসূচি পালন শুরু করেন।