শরীয়তপুরে অক্সিজেনের অভাবে দুই নবজাতকের মৃত্যু

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে দুই নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
স্বজনদের অভিযোগ, দুই শিশুর মৃত্যুর পর চিকিৎসা অসমাপ্ত রেখে অনেক শিশুকে ছেড়ে দেওয়া (রিলিজ) হচ্ছে হাসপাতাল থেকে। চাহিদার তুলনায় একেবারেই কম অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ থাকায় এমনটা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
মৃত নবজাতকদের স্বজনরা জানিয়েছে, গত সোমবার সন্ধ্যায় ভেদরগঞ্জ পদ্মা জেনারেল হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পুটিয়া গ্রামের শহীদ মৃধা ও জিয়াসমিন মৃধা দম্পতির ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। ওই দিনই রাত ৮টার দিকে ভেদরগঞ্জ পদ্মা জেনারেল হাসপাতাল থেকে নবজাতককে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেদিন দুপুর ২টার দিকে জেলা শহরের হাওলাদার ক্লিনিকে ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার মিয়ারচর দিয়ারা চৌকিদার কান্দি গ্রামের শাহাবুদ্দিন চৌকিদার ও ফারজানা দম্পত্তির জমজ ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। এর মধ্যে একজনের শ্বাসকষ্ট হলে গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে এক নবজাতককে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেদিন রাত ১০টার দিকে অক্সিজেনের অভাবে প্রথমে একটি শিশু মারা যায়। এর ১৫ মিনিট পর আরেকটি শিশুর মৃত্যু হয়।
নিহত নবজাতকের আত্মীয় লাভলী বেগম (৩০) বলেন, ‘চিকিৎসক অক্সিজেন মাস্ক খুলতে নিষেধ করেছিলেন। রাত জাগার কারণে শিশুটির পাশে ঘুমিয়ে পড়ি। এ সময় নার্স এসে আমাদের না জানিয়ে অক্সিজেন খুলে নিয়ে যান। ঘুম থেকে উঠে শিশুটির অবস্থা খারাপ দেখে তাদের আমি অনেক অনুরোধ করেছি অক্সিজেন দেওয়ার জন্য। নার্সরা বলেন, ডাক্তারের কাছে জানাতে। আমি ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার বলেন নার্সের কাছে যেতে। তারা আমার কোনো কথাই শোনেননি। পরে রাত ১০টার দিকে আমাদের নবজাতক মারা যায়।’
পদ্মা জেনারেল হাসপাতালে জন্ম নেওয়া নবজাতকের বাবা শহীদ মৃধা বলেন, ‘শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করার পর নার্সরা জানান তাঁদের কাছে অক্সিজেন নেই। পরে আমি এক ছেলেকে ২০০ টাকা দেওয়ার পর তাঁরা আমাকে অক্সিজেন এনে দেন। এর পর আমার ছেলে ভালো ছিল। ডাক্তার আমাদের অক্সিজেন খুলতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু নার্সরা আমাদের না জানিয়ে অক্সিজেন খুলে নিয়ে যাওয়ার পর আমার ছেলে মারা যায়।’
এ ব্যপারে কথা বলতে দায়িত্বে থাকা নার্স স্মৃতির মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোনটি রিসিভ করে রেখে দেন। তিনি কোনো কথা বলেননি।
এ ব্যাপারে কর্তব্যরত চিকিৎসক নবজাতক শিশু ও কিশোর বিশেষজ্ঞ ডা. মিজানুর রহমান বলেন, তিনটি ওয়ার্ডে মাত্র একটি অক্সিজেন ছিল। এ কারণে একসঙ্গে দুটি শিশুকে অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে অক্সিজেনের কারণেই যে শিশু দুটির মৃত্যু হয়েছে এমনটা নাও হতে পারে। শিশুর অবস্থা খারাপ ছিল। শিশু দুটিকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা ঢাকায় নেয়নি।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও সিভিল সার্জন মশিউর রহমান বলেন,সদর হাসপাতালে অক্সিজেন ফ্লো-মিটারসহ চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। অক্সিজেনের অভাবে শিশুর মৃত্যুর ঘটনাটি দুঃখজনক। ১০টি ফ্লো-মিটার সরবরাহ করার জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কারো দায়িত্ব পালনে অবহেলা থাকলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।