গরু হারিয়ে কিশোরের আত্মহত্যা, ‘প্ররোচনাকারী’কে ছেড়ে দিল পুলিশ

নওগাঁর মান্দা উপজেলার ভারশো ইউনিয়নের বাঁকাপুর গ্রামে গোয়াল থেকে ছুটে যাওয়া গরু ফেরত না পাওয়ায় রণজিত কুমার (১৭) নামে এক কলেজছাত্র আত্মহত্যা করেছে।
এই ঘটনায় মতিউর রহমানকে (৩২) নামের এক ব্যক্তিকে বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ আটক করে। পরে আজ শুক্রবার তাঁকে মদ্যপানের অভিযোগে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে গেছেন মা জ্যোৎস্না রানী। নিহত রণজিত কুমার ওই গ্রামের মৃত কানাইলালের ছেলে ও মান্দা উত্তরা ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্র ছিল।
আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারী মতিউর রহমানের বাড়ি একই গ্রামে।
স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কানাইলাল সরকার দু-তিন বছর আগে মারা যান। ভিটেমাটি ছাড়া কিছুই রেখে যাননি। কানাইলালের মৃত্যুর পর থেকে একমাত্র ছেলে রণজিতকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবেন, এমন আশা ছিল মায়ের। গত বছর এসএসসি পাস করার পর রণজিতকে স্থানীয় মান্দা উত্তরা ডিগ্রি কলেজে ভর্তি করে দেন তার মা। রণজিত পড়শোনার পাশাপাশি মানুষের বাড়িতেও কাজ করত।
স্থানীয়রা জানায়, গত সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রণজিতের বাড়ির গোয়ালঘর থেকে গরুটি ছুটে যায়। রাতে অনেক খোঁজাখুঁজি করে পায়নি তার পরিবার। পরদিন মঙ্গলবার সকালে স্থানীয়দের মাধ্যমে রণজিত জানতে পারে, একই গ্রামের মতিউর রহমান তাঁর বাড়িতে গরুটি আটকে রেখেছেন। এমন তথ্যের ভিত্তিতে সে মতিউরের বাড়ি গিয়ে গরুটি ফেরত চায়। কিন্তু গরুটি নিজের বলে দাবি করেন মতিউর। স্থানীয়দের সহযোগিতায় গরুটি উদ্ধার করতে না পেরে রণজিত বাড়িতে এসে ঘরের ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। রণজিত দীর্ঘ সময় ঘরের মধ্যে থেকে বের না হওয়ায় প্রতিবেশীদের সন্দেহ হয়। তারা দরজা ভেঙে রণজিতের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে।
এ সময় আত্মহত্যার কারণ উল্লেখ করে রণজিতের লেখা একটি চিঠি উদ্ধার করা হয়। এতে সে লিখেছে, হারানো গরু পাওয়ার পরও ফেরত না দেওয়ায় কষ্ট সহ্য না করতে পেরেই সে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।
এ ঘটনায় নিহতের মা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাজিবুল আলম জানান, পুলিশ চোলাই মদ্যপানের অভিযোগে মতিউরকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করেছিল। এ জন্য পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তবে অন্য কোনো বিষয় আছে কি না, তা তিনি জানেন না।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সুমন জানান, গরুটি রণজিতের তা মতিউর জানতেন না। রণজিতের মৃত্যুর পর ষাঁড়টি ছেড়ে দিলে রণজিতের বাড়ি চলে আসে। তিনি আরো জানান, একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে অসহায় মা জ্যোৎস্না রানী এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফ্ফর হোসেন জিডির কথা স্বীকার করেন। মতিউরকে কেন মদ্যপানের অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দশটি কাজ করলে দু-একটি ভুল হতেই পারে। আর এত প্রশ্ন করলে কোনো উত্তর দেওয়া যায় না। মান্দা থানায় আমার দুই বছর চাকরি হলো। এখন বদলির সময় হয়ে গেছে। এ সময় দয়া করে এ ধরনের নিউজ প্রকাশ করে আমাকে বিপদে ফেলবেন না।’