দাবি না মানলে মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের আল্টিমেটাম সাত কলেজের

‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের’ জন্য অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি না করা হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা জানিয়েছে, আগামী রোববারের মধ্যে তাদের এই দাবি মানতে হবে। শিক্ষার্থীরা এবার জনদুর্ভোগ এড়াতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ঘেরাও করার কর্মসূচি দেবে।
ঢাকার সরকারি সাতটি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের অধ্যাদেশ জারির দাবিতে আজ শনিবার (১৭ মে) বিকেলে ইডেন মহিলা কলেজের ভেতরে ১ নম্বর ফটকের কাছে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা এই ঘোষণা দেন। এ সময় সাত কলেজের বহু শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা পাঁচটি দাবি তুলে ধরা হয়। অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি ছাড়াও অন্য দাবিগুলো হলো—অন্তর্বর্তী প্রশাসকের নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার পর সেশনজট নিরসনসহ সামগ্রিক বিষয় নিয়ে একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ এবং ‘ভুতুড়ে ফল’-এর সমাধান; বিভিন্ন ইস্যুতে অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধসহ যাবতীয় অসংগতিগুলোর সুস্পষ্ট সমাধান; অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের পরবর্তী দুই কার্যদিবসের মধ্যে ২০২৪-২৫ সেশনের ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া; আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা ও লোগো বা মনোগ্রাম প্রকাশ এবং আগামী এক মাস তথা ১৬ জুনের মধ্যে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ জারি ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে নবগঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া।
শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা স্পষ্ট করে জানান, প্রথম দাবি অর্থাৎ অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রজ্ঞাপন জারি করা না হলে তারা মাঠের কর্মসূচির পাশাপাশি বাকি দাবিগুলোর বিষয়েও কঠোর নজরদারি করবেন। এবার রাজপথে নামলে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ হাতে নিয়েই তারা ক্যাম্পাসে ফিরবেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী জাফরিন আক্তার ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আবিদ হাসান। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষার মৌলিক অধিকারের জন্য বারবার রাস্তায় নেমে মার খেয়েছে, রক্ত দিয়েছে ও অনেকের অঙ্গহানি পর্যন্ত হয়েছে। তারা একটি সুস্থ শিক্ষাব্যবস্থা চেয়ে আসছেন। অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার তারা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমর্থনে একবারে চূড়ান্ত সমাধানের পথ বেছে নিয়েছেন।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, তারা জানতে পেরেছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সাত কলেজের নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকেবি)’ প্রস্তাব করেছে। শুধু নাম নয়, নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো ও মডেলও প্রস্তুত রয়েছে। ইউজিসি জানিয়েছে, খুব শীঘ্রই নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো ও মডেল প্রকাশ করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, সাত কলেজের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্তি বাতিলের পর চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি ইউজিসি এই কলেজগুলো পরিচালনার জন্য একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রস্তাব করে। অধিভুক্তি বাতিল ও নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরুর মধ্যবর্তী সময়ে এই প্রশাসন দায়িত্ব পালন করার কথা। তবে ইউজিসির প্রস্তাবের আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও অন্তর্বর্তী প্রশাসনের চূড়ান্ত অনুমোদন মেলেনি, যা বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে আরও অভিযোগ করা হয়, একটি গোষ্ঠী সাত কলেজকে অবহেলা করার চেষ্টা করছে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম চূড়ান্ত হওয়ার পর স্বল্প সময়ের মধ্যে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রজ্ঞাপন জারির কথা থাকলেও রহস্যজনক কারণে তা এখনও আটকে আছে। অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রজ্ঞাপন ও অধ্যাদেশ জারি না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রশাসনিক কাঠামো, একাডেমিক কার্যক্রম, পরীক্ষাসহ সবকিছুতেই এখনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে, যা একটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে।
ঢাকার এই সাত সরকারি কলেজ হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এই কলেজগুলোতে প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থী এবং এক হাজারের বেশি শিক্ষক রয়েছেন।
এই কলেজগুলো পূর্বে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি এই সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। তবে অধিভুক্তির পর থেকে পরীক্ষা নেওয়া ও ফল প্রকাশসহ বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত আন্দোলন করে আসছিলেন। আট বছরে ছোট ছোট সমস্যাগুলো জমা হয়ে বড় আকার ধারণ করে। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত জানুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই সাত কলেজকে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করার সিদ্ধান্ত জানায়।