বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চীন এক নম্বর বন্ধু : বাণিজ্যমন্ত্রী

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, রাজনীতিতে মত ও পথের ভিন্নতা থাকতে পারে। তবে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সবাইকে একমত হতে হবে। তাহলে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ হবে। দেশও লাভবান হবে।
মন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সরকার ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ ও রাশিয়াসহ সবার সঙ্গে সুসস্পর্ক স্থাপন করেছে। চীনের সঙ্গে এ সম্পর্ক এখন সুউচ্চতায় রয়েছে। বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও তারা এক নম্বর বন্ধু। প্রায় শতভাগ পণ্যে আমরা শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছি। আমরাও বিলিয়ন ডলারের আমদানি করছি।’
আজ রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ-চীন বন্ধুত্ব : প্রাপ্তি ও প্রত্যশা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় বাণিজ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অর্থনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘বর্তমানে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। এর মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি থাকলেও তা নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। অনেক দেশে আমরা কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার পাচ্ছি। তাই চীনের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়ে একটু আস্তেধীরে এগুচ্ছি।’
চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে চীনে রফতানি ২৫ শতাংশ বেড়েছে। যেখানে এ সময়ে রপ্তানিতে জাতীয় গড় প্রবৃদ্ধি চার শতাংশ।
বাণিজ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ভবিষ্যতে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অনেক বাড়বে। দেশটির প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের মধ্যদিয়ে সেই পথ উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে।
এ সময় চীনা ঋণের সুদহার প্রসঙ্গে তোফায়েল আহমেদ বলেন, চীনা ঋণের একটি অসুবিধা রয়েছে। তা হলো এই ঋণ আনসলিসিট (টেন্ডারবিহীন)। এ ক্ষেত্রে সরকার দ্বিপক্ষীয় নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে যতদূর সম্ভব সহনীয় রাখার চেষ্টা করছে।
আগামী ১৫ অক্টোবর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের বাংলাদেশ সফরকালে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে রেলপথ নির্মাণ, পূর্বাচলে ট্রেড ফেয়ার সেন্টার ও গার্মেন্টস পল্লী নির্মাণসহ একাধিক চুক্তি হবে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।
ইআরএফ সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী ছাড়াও সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান ড. সাদিক আহমেদ, বিআইআইএসএস চেয়ারম্যান মুন্সি ফয়েজ আহমেদ, বিএফইউজের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল প্রমুখ বক্তব্য দেন।
ড. সাদিক আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু এখনো চীন থেকে শিক্ষা নেওয়ার অনেক কিছু আছে। সেটি হতে পারে মানবসম্পদ, প্রযুক্তি ও মেধাস্বত্ব। কীভাবে চীনের বিনিয়োগ এদেশে বাড়ানো যায় এ মুহূর্তে সেটিই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। এ জন্য রপ্তানি বাণিজ্যকে বহুমুখীকরণের পাশাপাশি চীনকে এ দেশের বহুমুখী বিনিয়োগেও নিয়ে আসতে হবে। কারণ তারা শুধু অস্ট্রেলিয়া ও ইউএসএসই ১ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ করছে। এর এক শতাংশও যদি বাংলাদেশে আসে তাহলে দেশের অর্থনীতি সীমাহীন উচ্চতায় পৌঁছাবে।
সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছাতে হলে চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে। কেননা মেধাস্বত্ব এবং কারিগরি জ্ঞানে তারা যথেষ্ট উন্নত। এক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। পদ্মা সেতুর মতো আরো বড় বড় প্রকল্পে চীনকে পাশে পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘চীনের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। প্রাপ্তিও আছে। তাই ভবিষ্যতে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের জলে-স্থলে ও অন্তরীক্ষে সম্পর্কোন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে।’
সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘ব্যবসা এবং রাজনীতি এখন হাত ধরাধরি করে চলে। অর্থনীতির স্বার্থেই আমাদের এই বৈদেশিক সম্পর্কোন্নয়নে নজর দিতে হবে। সেটি করতে হবে সতর্কতার সঙ্গে। কোনো পদক্ষেপে দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয় এমন কোনো পদক্ষেপ সরকার নেবে না সেটিই সবাই আশা করে।
বিআইআইএসএসের চেয়ারম্যান মুন্সি ফয়েজ আহমেদ বলেন, চীনের সঙ্গে সবচেয়ে কার্যকর হতে পারে বিসিআইএম করিডরের বাস্তব রূপায়ন। চীনের বিনিয়োগ ও ঋণ সহায়তাও বাংলাদেশের জন্য কার্যকরী। তবে চীনের ঋণসহায়তার শর্ত একটু জটিল। এদিকে সরকারকে নজর দিতে হবে।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম তাঁর মূল প্রবন্ধে বলেন, “বিশ্ব অর্থনীতির প্রধান এই অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক ‘টেস্ট কেস’ হবে। কারণ আমরা যদি চীনের এক শতাংশ বাজারও ধরতে পারি তাহলেও আমাদের রপ্তানি ১৭ বিলিয়নে পৌঁছানোর কথা।”