নূর হোসেন অবশেষে বরখাস্ত
নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সিটি করপোরেশন শাখা থেকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে ওই পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে ৪ নম্বর ওয়ার্ডকে শূন্য ঘোষণা করে ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন আয়োজন করতে নির্বাচন কমিশনকে (নিক) নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব জসিম উদ্দিন হায়দার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘মামলা নং ৪৮৯/১৪ এর প্রধান আসামি নূর হোসেন নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে অপরাধী। যেহেতু সিটি করপোরেশন কাউন্সিলর নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে আদালতে দণ্ডিত হলে স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী অপসারণযোগ্য হন, সেহেতু স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯-এর ১৩ ধারা অনুযায়ী তাকে অপসারণ করা হলো এবং আসন শূন্য ঘোষণা করা হলো।’
মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার স্বাক্ষর করা হলেও আজ রবিবার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের জানানো হয়।
সাত খুনের মামলায় প্রধান আসামি হওয়া ছাড়াও নারায়ণগঞ্জের আদালতে বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২-এর ধারা ৩৪ অনুযায়ী নূর হোসেনের সাজা হয়েছে। সাজা পাওয়ার সাত মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর সরকার তাঁর বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নিল।
এ ছাড়া ফৌজদারি মামলাজনিত কারণে নারায়ণগঞ্জের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহজালাল বাদলকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। শাহজালাল সম্পর্কে নূর হোসেনের ভাতিজা। সাত খুনের ঘটনার পর থেকে নূর হোসেনের সাথে শাহজালালও পলাতক আছেন। তাঁদের বিষয়ে নির্দেশ চেয়ে গত বছরের অক্টোবরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় সিটি করপোরেশন। কিন্তু এতদিন চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত না দেওয়ায় তাঁরা দুজনই কাউন্সিলর পদে বহাল ছিলেন।
গত বছরের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জে সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম এবং আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন অপহৃত হন। ৩০ এপ্রিল ছয়জনের এবং ১ মে একজনের লাশ শীতলক্ষ্যায় ভেসে ওঠে। লাশ উদ্ধারের আগেই নূর হোসেন ভারতে পালিয়ে যান। এরপর ২৮ এপ্রিল কাউন্সিলর নজরুল ও তাঁর চার সহযোগীকে অপহরণ করে খুনের অভিযোগে তাঁর স্ত্রী সেলিনা ইসলাম ফতুল্লা থানায় নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে মামলা করেন। ওই বছরের ২ মে ভারতের পুলিশ অনুপ্রবেশের অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে ওই দেশের আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা চলছে।
সাত খুনের মামলায় বিচারের মুখোমুখি করতে নূর হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ার কথা বারবার বলা হলেও এখন পর্যন্ত তাঁকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যায়নি।
নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সূত্র জানায়, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের কারাগারে থাকা নূর হোসেনের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ২২টি মামলা রয়েছে। সাধারণ ডায়েরি (জিডি) আছে আরো দুটি। শাহজালাল বাদলের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় এরকটি মামলা রয়েছে। সাত খুনের পর গত বছরের মে মাসে জেলা প্রশাসন নূর হোসেন, শাহজালাল বাদল ও তাঁদের সহযোগীদের ১১টি অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করে।