৬৮ বছর পর ভোট দেবেন তাঁরা
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2016/10/27/photo-1477577578.jpg)
কুড়িগ্রামে জমে উঠেছে ছয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। ৬৮ বছরের বন্দিদশা থেকে মুক্ত সদ্য নাগরিকত্ব পাওয়া বিলুপ্ত ছিটমহলের লোকজন এ নির্বাচনে ভোটার হওয়ায় যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা।
প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকরা দিনভর পর্যন্ত প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাসিন্দাদের জীবন-মান উন্নয়নে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন ও বিলুপ্ত ছিটমহল সংযুক্ত হওয়ায় এ নির্বাচন মর্যাদার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে প্রার্থী ও সমর্থকদের কাছে।
আগামী ৩১ অক্টোবর ফুলবাড়ী উপজেলার দাসিয়ারছড়া লাগোয়া ফুলবাড়ী, কাশিপুর ও ভাঙ্গামোড় ইউনিয়ন এবং ভুরুঙ্গামারী উপজেলার বিলুপ্ত ছিটমহল লাগোয়া পাথরডুবি, শিলকুড়ি ও ভুরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। দুই উপজেলার ১২টি বিলুপ্ত ছিটের দুই হাজার ৯৯২ জন ভোটার বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে এই প্রথম ভোট দেবেন। প্রার্থী ও সমর্থকরা ভোটারদের কাছে টানতে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। ভোটাররাও হিসাব কষছেন আগামী পাঁচ বছর সুখে-দুঃখে তাদের পাশে থাকবেন এ রকম প্রার্থী নির্বাচন করার।
ফুলবাড়ী উপজেলার ৩ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে ১৬, সংরক্ষিত সদস্য পদে ৫১ এবং সাধারণ সদস্য পদে ১০৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ তিন ইউনিয়নে মোট ভোটার ৭১ হাজার ৭৫২ জন। মোট ভোট কেন্দ্র ৪৬টি। এর মধ্যে বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার ভোটার সংখ্যা দুই হাজার ৭০০ জন।
অন্যদিকে, ভুরুঙ্গামারী উপজেলার তিন ইউনিয়নে চেয়াম্যান পদে ১৫, সংরক্ষিত সদস্য পদে ৩৩ এবং সাধারণ সদস্য পদে ৯৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ তিন ইউনিয়নে মোট ভোটার ৬৩ হাজার ৩৫৯। মোট ভোট কেন্দ্র ৩৮টি। এর মধ্যে সেউতি কুরশা, বড় গাঁওচুলকা, সাহেবগঞ্জসহ ১০টি বিলুপ্ত ছিটমহলের ভোটার সংখ্যা ২৯২ জন।
দাসিয়ারছড়া বিলুপ্ত ছিটের বাসিন্দারা জানায়, প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে পছন্দমত প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবে, এ খুশি যেন তাদের ঈদের খুশির মতো।
বিলুপ্ত ছিট দাসিয়ারছড়ার কামালপুর গ্রামের বৃদ্ধ আব্দুল হাকিম বলেন, ‘আমার বয়স বর্তমানে ১০০ বছর। আর কতদিন বাঁচব জানি না। মৃত্যুর আগে ভোট দিতে পারব এটাই আমার কাছে সবচেয়ে খুশির বিষয়।’
বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি বাংলাদেশ অংশের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা জানান, প্রথম ভোট দিতে পারবে বলে ছিটের বাসিন্দারা অত্যন্ত খুশি। কিন্তু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সবচেয়ে বড় ছিট দাসিয়ারছড়ায় সরকারি হিসেব মতে সাত হাজার মানুষের বসবাস। আর এর মধ্যে ভোটার হয়েছে দুই হাজার ৭০০ মানুষ। আরো চার শতাধিক মানুষ ভোটার হতে পারেনি। এই দীর্ঘ আন্দোলনের পর মুক্তি পাওয়া সব মানুষ একসাথে ভোট দিতে পারলে আরো বেশি ভালো হতো।
নৌকা, ধানের শীষ এবং লাঙ্গল প্রতীকে প্রার্থীরা শতভাগ বিজয়ী হওয়ার আশা করলেও স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থীরাও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, সীমান্তবর্তী দুই উপজেলা ও সদ্য বিলুপ্ত ছিটের মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।