‘আশ্বাসে’ ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে রাস্তায় নেমে হয়রানি

চট্টগ্রামে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। উচ্চ আদালতের নির্দেশে এ ধরনের রিকশা চলাচল কিছুদিন বন্ধ ছিল। অভিযোগ উঠেছে, বিগত সিটি নির্বাচনের সময় এক শ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগী টাকার বিনিময়ে রিকশাগুলো আবার রাস্তায় নামতে উৎসাহিত করে। হঠাৎ করে পুলিশি ধরপাকড় শুরু হলে দিশেহারা হয়ে পড়েন এসব রিকশার মালিক ও শ্রমিকরা।
২০১৩ সালের শুরু থেকে চট্টগ্রামে চালু হয় ব্যাটারিচালিত রিকশা। সিটি করপোরেশনের অনুমতি না থাকলেও ক্রমশ বাড়তে থাকে এর সংখ্যা। ফলে যানজট তীব্র হওয়ার পাশাপাশি ঘটতে থাকে একের পর এক দুর্ঘটনা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত ২০ মার্চ থেকে নগরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ করে দেয় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ-সিএমপি। এরই মধ্যে সিটি করপোরেশন নির্বাচন চলার সময় আওয়ামী লীগ নেতা হাছান মাহমুদ গত ১৯ এপ্রিল ওয়াসা মোড়ে এক সভায় মেয়র পদপ্রার্থী আ জ ম নাছির নির্বাচিত হলে নগরীতে ফের ব্যাটারিচালিত রিকশা চলার আশ্বাস দেন।
রিকশা মালিক ও চালকরা অভিযোগ করেন, নির্বাচনের সময়ই এক শ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগী এসব রিকশা রাস্তায় নামতে উৎসাহিত করে।
এ ব্যাপারে নগরীর তিনজন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক জানান, তাঁরা ব্যাটারিচালিত রিকশা চালানোর জন্য টাকা দেন। তারপরও তাঁদের পুলিশি হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে। পুলিশ হয়রানি করবে না- রিকশামালিকের এমন আশ্বাসেই তাঁরা রিকশা নিয়ে পথে নেমেছেন। কিন্তু রাস্তায় নামার পর তাঁদের রিকশা আটক করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।
বর্তমানে চট্টগ্রামে ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা কত তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। বিভিন্ন নামে আটটিরও বেশি সংগঠন নিয়ন্ত্রণ করে থাকে এসব রিকশা। লাইসেন্সের নামে দিয়ে থাকে নম্বর প্লেট। সমিতির নামসংবলিত এসব নম্বর প্লেটের কোনো কোনোটিতে সরকারপ্রধানের ছবিও ব্যবহার করা হয়। রিকশা চলাচল নির্বিঘ্ন করতে টাকার বিনিময়ে এতসব করার পরও ধরপাকড় কেন সে বিষয়টি বুঝে উঠতে পারছেন না রিকশামালিকরা।
রিকশামালিক জামাল হোসেন জানান, সকালে তাঁর রিকশাগুলো বের হয়ে যায়। পরে পুলিশ সেগুলো আটক করে। এ নিয়ে তিনি কিছুই জানেন না। রিকশা আটকের ব্যাপারে পত্রিকায় বা টেলিভিশনে কিছু বলা হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
শাহনাজ নামের এক রিকশামালিক বলেন, ‘এতদিন আমার রিকশা পড়ে ছিল। এখন ব্যাটারি লাগিয়ে চালানো শুরু করেছি। কিন্তু পুলিশ কেন আটক করছে তা আমি জানি না।’
রিকশা আটক করে পুলিশ হয়রানি করছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন রিকশাচালক মুরাদ।
শুক্রবার সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের চৌকি বসে অবৈধভাবে চলাচলকারী ব্যাটারিচালিত রিকশা ধরতে। শখানেক ধরতেই রাস্তায় কমতে থাকে এ ধরনের রিকশার সংখ্যা। আটক রিকশাগুলো নিয়ে যাওয়া হয় সদরঘাটে সিএমপি ট্রাফিক কর্মকর্তার কার্যালয় এলাকায়। এখন থেকে এই অভিযান নিয়মিত চলবে বলে জানান ট্রাফিক কর্মকর্তারা।
সিএমপির ট্রাফিক সার্জেন্ট মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই সকাল থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা আটকের অভিযান চলছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
চট্টগ্রামে চলাচলকারী ব্যাটারিচালিত রিকশার কারণে যানজট আর দুর্ঘটনা ছাড়াও প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ অবৈধভাবে ব্যবহার করে বলেও অভিযোগ রয়েছে।