শরীয়তপুরে চিকিৎসকের অবহেলায় শ্রমিক মৃত্যুর অভিযোগ

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে মনির হোসেন ফরাজি (২৮) নামে একজন নির্মাণশ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ, চিকিৎসকের অবহেলায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মনির হোসেন হাসপাতালে ভর্তি হন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল ও নিহতের পরিবার জানায়, ঘটনার দিন সকাল ৮টার দিকে মনির হোসেন কাজের উদ্দেশ্যে তাঁর বাড়ি চিতলিয়া ইউনিয়নের মজুমদার কান্দি থেকে নছিমনে করে ডোমসার বাজারে যাচ্ছিলেন। ডোমসার দীঘির পাড় ব্রিজের কাছে এলে নছিমনটি উল্টে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে সাড়ে ৮টায় শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক ছিলেন ডা. দেবাশীষ সাহা। রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসক আকরাম এলাহীকে ডাক দেন তিনি।
চিকিৎসক আকরাম এলাহী সকাল সাড়ে ১০টায় মনিরকে দেখতে হাসপাতালে আসেন। মনির হোসেনকে দেখে বিভিন্ন রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। তাঁর ডান উরুর হাড় ভেঙে এবং মস্তিষ্কে জখম হয়েছে বলে জানান চিকিৎসক আকরাম এলাহী। আহত মনিরকে অস্ত্রোপচার করাতে হবে বলে ২০ হাজার টাকা চুক্তিতে তাঁর মালিকানাধীন হাজী শরীয়তউল্লাহ ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেন। আহত মনিরের ছোট ভাই নুর হোসেনের কাছ থেকে নগদ সাড়ে তিন হাজার টাকা অগ্রিম নেন ওই চিকিৎসক। বিকেল ৩টা বেজে গেলেও মনিরের চিকিৎসা দিতে যাননি আকরাম এলাহী। রোগীর অবস্থা বেগতিক দেখে বিকেল ৩টায় আবার শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় মনিরকে। পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে মারা যান মনির।
মনির হোসেনের ছোট ভাই নূর হোসেন ফরাজী (২২) বলেন, ‘হাসপাতালে আমার ভাইকে ভর্তি করার পর ডাক্তার আকরাম এলাহী তাঁকে চিকিৎসা দেন এবং বলেন, আপনার ভাইয়ের পায়ের অস্ত্রোপচার এই হাসপাতালে হবে না। এই হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করার মতো কোনো যন্ত্রপাতি নেই। আপনার ভাইকে এখন আমার ক্লিনিকে নিয়ে যান। আমি কিছুক্ষণ পরে এসে অস্ত্রোপচার করব। আমি তাঁর কথামতো হাজী শরীয়তুল্লাহ ক্লিনিকে নিয়ে যাই। অস্ত্রোপচার করতে ২০ হাজার টাকা লাগবে। আমার কাছে তখন এত টাকা ছিল না। আমি তাকে সাড়ে তিন হাজার টাকা দেই। বিকেল ৩টা বেজে গেলেও তিনি আমার ভাইকে চিকিৎসা দিতে আসেনি।’
এ ব্যাপারে কথা বলতে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক আকরাম এলাহীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে গেলে তাঁকে হাসপাতালের চেম্বারে পাওয়া যায়নি। পরে তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সুমন কুমার পোদ্দার বলেন, ‘মনির হোসেন নামে একটি রোগী এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। আমাদের সাধ্যমতো তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। এরপর কী হয়েছে আমি বলতে পারি না।’
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ঘটনা আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে দেখব। হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে চিকিৎসা না দিয়ে থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’