রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে এত বড় রিস্ক নিতে পারি না

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল ইসলাম মিয়ানমার থেকে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে জীবন নিয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলিমদের এ দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় দেওয়ার পক্ষে নন।
আজ বুধবার গাজীপুরের কোনাবাড়িতে কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে এক মতবিনিময় সভায় কাজী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘আমার প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে, আমার দেশের মানুষের মানবাধিকার রক্ষা করা। আমার দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় এমন কোনো কাজ আমরা করতে পারি না। এজন্য সুধীজনরা, বিজ্ঞ ব্যক্তিরা বলছেন যে, আমরা কোনোভাবেই এত লোকের (রোহিঙ্গা) লোড নিতে পারি না।’
চার থেকে পাঁচ লাখ ‘আন-ডকুমেন্টেড’ রোহিঙ্গা লোক এ দেশে বসবাস করছে উল্লেখ করে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘আমাদের সরকার বা সমাজ তাদের কিন্তু বের করে দেয়নি। আমি বহুবার কক্সবাজার গিয়েছি। তারা (স্থানীয়রা) অভিযোগ করেছে, এরা বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করছে। রাস্তাঘাট নোংরা করছে, পায়খানা করছে, এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের ক্রাইম করছে।’
‘আমাদের দেশ থেকে পাসপোর্ট নিয়ে তারা বিদেশে চলে যাচ্ছে। সেখানে গিয়ে তারা ক্রাইম করছে। সৌদি আরবে বড় বড় নিউজ আসছে, বাংলাদেশিরা এসব ক্রাইমে জড়িত।’
এ সব কারণেই কাজী রিয়াজুল ইসলাম মনে করেন, ‘এতবড় রিস্ক তো আমরা নিতে পারি না।’
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘কাকে ঢুকতে দেব, সঙ্গে অস্ত্র নিয়ে আসবে, ইয়াবা নিয়ে আসবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমার প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে, আমার দেশের মানুষের মানবাধিকার সুরক্ষা করা। বাংলাদেশে আর কোনো নতুন মানুষকে নিয়ে আমাদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়, এমন কোনো কাজ করতে পারি না। আর যাই বলেন, আমি আমার দেশকে ভালোবাসি, দেশের মানুষকে ভালোবাসি। আমার দেশের মানুষের জন্য যেটা মঙ্গল হবে, কল্যাণকর হবে- আমরা সেটার পক্ষেই যাব। আমার দেশের মানুষের ক্ষতি করে আমরা বিশ্বমানবতা দেখাতে… এটা আমার মনে হয়, কতটুকু সমীচীন হবে সেটা আপনারাই বিবেচনা করে দেখবেন।’
কাজী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ১৯৭৮ সাল থেকে আমাদের দেশে রোহিঙ্গা আসতে শুরু করে। ওই দেশ থেকে আমাদের দেশে প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা দেশে ঢুকেছিল। পরে আলাপ আলোচনা করে তাদের ওই দেশে ফেরত পাঠানো হয়। তারপরও কক্সবাজারের দুইটি ক্যাম্পে সরকারি হিসাব মতে এখনো প্রায় ৩৫ হাজারের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে রয়ে গেছে। তবে বেসরকারি হিসাব মতে ওই সংখ্যা আরো অনেক বেশি।
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান আরো বলেন, আপনারা জানেন মিয়ানমার হয়ে আমাদের হিল ডিস্ট্রিক হয়ে একটা রুট আছে-যেখান দিয়ে যেমন অস্ত্র আসে, ইয়াবাও তেমন আসে। এ ব্যাপারে আমরা যদি স্ট্রিক না হই, তাহলে এটা বাংলাদেশকে শেষ করে দেবে। জঙ্গিরা যেমন এ দেশের প্রগ্রেসিভ মানুষকে, মুক্তমনা মানুষকে, সত্য কথা যারা বলে তাদের কাউকে থাকতে দেবে না। আমাদের অনেককেই হয়তো তারা শেষ করে ফেলবে। তেমনি দেশে ইয়াবা যদি ঢুকে যায় তাহলে এ দেশের সমাজ নষ্ট যাবে, এ প্রজন্ম নষ্ট হয়ে যাবে। এমনিতেই ইয়াবার ভয়ে আমরা এখন আতঙ্কিত। সেই কারণে এত বড় রিক্স তো আমরা নিতে পারি না। কাকে ঢুকতে দেব তার সাথে সে অস্ত্র নিয়ে আসবে, ইয়াবা নিয়ে আসবে এটাতো বলা যায় না।
মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচির সমালোচনা করে কাজী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। অথচ উনি ক্ষমতায় আসার পর মানুষের ওপর নির্যাতন হচ্ছে। তাদের চোখের সামনে তাদের মা-বাবা, ভাই-বোনদের মেরে ফেলা হচ্ছে। তারা পালিয়ে বাঁচতে চেষ্টা করছে।
এর আগে কোনাবাড়িতে অবস্থিত কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্র ঘুরে দেখে সেখানে থাকা ১২৭ জন বন্দি কিশোরীর সঙ্গে কথা বলেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান। তিনি জানান, এখানে কিছু অব্যবস্থাপনা রয়েছে এমন অভিযোগ পেয়ে পরিদর্শনে এসেছি।
শিক্ষার ব্যাপারে কাজী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে কেবল প্রাইমারি পর্যন্ত শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসির ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে। আমি সরকারকে বলব শিগগিরই এখানে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।
ওই কেন্দ্রের নিবাসীদের প্রশিক্ষণের ব্যাপারে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, এখানে ভোকেশনাল প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা রয়েছে। ডিজিটাল যুগেও সাধারণ সেলাই মেশিন ও এমব্রয়ডারির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এটা এখন আউটডেটেড। এখানে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া অপরাধী নয় এমন ভিক্টিম ও নিরাপত্তা হেফাজতিদের এসব কেন্দ্রে না রেখে সমাজসেবা অধিদপ্তরের শিশু পরিবারে আলাদাভাবে রাখারও জন্য সরকারকে অনুরোধ করেন তিনি।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা হাকিম রাহেনুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনোয়ার হোসেন, জেলা সমাজসেবা উপপরিচালক শংকর স্মরণ সাহা, কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক মো. আমানুল্লাহ প্রমুখ।