জীবিত মাকে হাসপাতালে রেখে থানায় হত্যা মামলা!

জমি নিয়ে বিরোধে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে আহত মাকে চিকিৎসা দিতে ঢাকায় হাসপাতালে ভর্তি করান। এলাকায় ফিরে ওই মায়ের ছেলে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। জানান, তাঁর মা নিহত হয়েছেন। পুলিশও মামলা গ্রহণ করে।
পরে তদন্ত করতে গিয়ে জানা যায়, বাদীর মা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ওই মায়ের ছেলের নাম ওমর ফারুক। তাঁর বাড়ি নরসিংদী সদর উপজেলার দক্ষিণ শিলমান্দী গ্রামে। গত ৯ ডিসেম্বর ওই গ্রামেই দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হন ওমর ফারুকের মা মমতাজ বেগম (৫০)।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ শিলমান্দী গ্রামের জাকির হোসেন ও ওমর ফারুকের মধ্যে জমি সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। এ নিয়ে গত ৯ ডিসেম্বর সকালে উভয়পক্ষের মধ্যে প্রথমে কথা কাটাকাটি হয়। পরে দুপুর ১২টায় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের লোকজনই আহত হয়। এ ঘটনার পর ওমর ফারুক তাঁর আহত মা মমতাজ বেগমকে গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে নরসিংদী সদর হাসপাতাল এবং পরে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করেন।
পরে ওমর ফারুক সদর মডেল থানায় গিয়ে তাঁর মাকে হত্যা করা হয়েছে মর্মে একটি এজাহার দাখিল করেন। নরসিংদী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একই দিন রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে বিনা তদন্তে মামলাটি রুজু করে ফেলেন। যার মামলা নম্বর ১৫ (১২) ২০১৬।
এ মামলা তদন্তের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদেরকে জানান, যাকে মৃত বলে অভিযোগটি দায়ের করা হয়ে ছিল সেই মমতাজ বেগম বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ইউনিটে ভর্তি আছেন। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে মমতাজ বেগমের ছেলে ওমর ফারুক সানাউল্লাহ নামের এক দালালের মাধ্যমে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভুল বুঝিয়ে মামলাটি রুজু করিয়েছেন।
এ ব্যাপারে নরসিংদী মডেল থানার ওসি গোলাম মোস্তফার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, তিনি ঘটনাস্থলে যাননি। তবে তদন্ত না করেও মামলা নেওয়ার সুযোগ আছে। তদন্তের জন্য একজন উপপরিদর্শককে (এসআই) ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, মমতাজ বেগম জীবিত। মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করায় এখন ২১১ ধারায় ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে তিনি জানান।
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) হাসিবুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিথ্যা মামলা রুজুর বিষয়টি আমি শুনেছি। তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মিথ্যা মামলা রুজুর সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।’