স্ত্রীর পর্নোগ্রাফি মামলায় স্বামী গ্রেপ্তার
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে স্ত্রীর করা পর্নোগ্রাফি মামলায় স্বামী মোজাহিদ হাসানকে (২৮) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁর বাড়ি শহরের কালিপুর মধ্যপাড়া এলাকায়। গতকাল বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাতে পৌর শহরের নদী বাংলা সেন্টার পয়েন্টের সামনে থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মোজাহিদ হাসানকে কিশোরগঞ্জ কোর্টে পাঠায় পুলিশ।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৮ মে পারিবারিকভাবে দ্বিতীয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন মোজাহিদ হাসান। তিনি পেশায় একজন আদম ব্যবসায়ী। তাঁর খারাপ ব্যবহার ও খারাপ চরিত্রের কারণে তাঁর প্রথম স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে চলে যান। দ্বিতীয় বিয়ের পর কিছুদিন যেতে না যেতেই ব্যবসার নাম করে মোজাহিদ টাকার জন্য তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীকে চাপ দেন। তখন মেয়ের সুখের কথা ভেবে তাঁর (স্ত্রীর) বাবা মোজাহিদকে ১০ লাখ টাকা দেন। তার কিছুদিন যেতে না যেতেই আবারও টাকার জন্য চাপ দেন মোজাহিদ। এতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ শুরু হয়। টাকা না দিলে স্ত্রীর আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি। এই কলহের জেরে স্বামী-স্ত্রী দুজনই আলাদা হয়ে যার যার বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। এরপর হঠাৎ একদিন মেয়ের পরিবার লোক মারফত জানতে পারে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও বিভিন্ন জনের মোবাইল ফোনে ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি। এরপর তিনি (স্ত্রী) তা সংগ্রহ করে গত ২৮ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে ভৈরব থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদ রানা সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অভিযুক্ত স্বামী মোজাহিদ হাসানকে গ্রেপ্তার করেন।
এ বিষয়ে স্ত্রী বলেন, ‘আমাকে সে শারীরিক ও মানসিককভাবে নির্যাতন করত। যৌতুকের টাকার জন্য মারধর করত। আমার সরলতার সুযোগে সে আমার আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও মোবাইল ফোনে ধারণ করে রাখে। আমি আমার বাবার বাড়িতে চলে এলে সেসব ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। বিষয়টি আমি লোকমাধ্যমে জেনে সেগুলো সংগ্রহ করি। পরে আমি আদালতে তার বিচার প্রার্থনা করি।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোজাহিদ হাসানের বড় ভাই রাকিব হাসান রকি বলেন, ‘আমার ভাই মোজাহিদের দ্বিতীয় স্ত্রীর চরিত্র খারাপ। আগে তার আরও দুটি বিয়ে হয়েছিল। চরিত্র খারাপ বলে অন্য স্বামীরা তাকে ছেড়ে দেয়। তার সঙ্গে একাধিক ছেলের সম্পর্ক রয়েছে। সে তার গর্ভে থাকা আমার ভাইয়ের সন্তান নষ্ট করে ফেললে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এরপর বিভিন্নজনের সঙ্গে মেলামেশার ভিডিও ও ছবি বিভিন্ন মাধ্যমে মুজাহিদের কাছে আসে। মুজাহিদ তার শ্বশুর-শাশুড়িকে এসব জানালে তারা মেয়েকে শাসন করে। পরে স্ত্রীকে ক্ষমা করে দিয়ে আবার সংসার শুরু করে আমার ভাই।’
রাকিব হাসান রকি আরও বলেন, ‘এরপর আবারও মুজাহিদের কাছে নতুন আরেকটি ছেলের সঙ্গে তোলা বিভিন্ন ছবি আসে। সেটা দেখার পর মুজাহিদ আবার তার স্ত্রীর সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। সেই দ্বন্দ্বে তার স্ত্রী আবার বাপের বাড়ি চলে যায় এবং তাকে তালাক দেয়। আমার ভাই এসব ভিডিও ছাড়ার ছেলে নয়। বরং অন্য প্রেমিকরা তার ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দিতে পারে। আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।’
এ বিষয়ের ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাকছুদুল আলম বলেন, আদালতের নির্দেশে মোজাহিদ হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেছেন স্ত্রী। গ্রেপ্তারের পর আজ দুপুরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’