ব্যাংকে প্রতারণার শিকার ভিখারি নূরজাহান, খুঁইয়েছেন ৯৩ হাজার টাকা
কুষ্টিয়া শহরে ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে গিয়ে প্রতারকের খপ্পড়ে পড়ে ৯৩ হাজার টাকা খুঁইয়েছেন এক ভিক্ষুক নূরজাহান (৯০)। তিনি ভিক্ষা করে জমানো এই টাকা আজ রোববার (২৬ জানুয়ারি) সকালে শহরের বড় বাজারে অগ্রণী ব্যাংকের শাখায় জমা রাখতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হন।
এ সংবাদ ব্যাংকপাড়ায় ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় সর্বস্ব হারানো ওই নারী সকালেই কুষ্টিয়া মডেল থানায় অভিযোগ করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায় আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভিখারি নূরজাহান ৯৩ হাজার টাকা ব্যাংকে নতুন হিসাব খুলে জমা রাখতে যান। তিনি ঠিকমতো হাঁটাচলাচল করতে না পারায় এক যুবক তাঁকে হিসাব খুলতে সহায়তায় এগিয়ে আসে। তাঁর কাছ থেকে ৯৩ হাজার টাকা নেন ব্যাংকে জমা দেওয়ার জন্য। অনেক সময় বসে থাকার পরও যুবক ফিরে না আসায় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চান তাঁর টাকা জমা হয়েছে কি না। তখন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায় নূরজাহান নামে কোনো হিসাব খোলা হয়নি বা ওই নামে কোনো টাকাও জমা পড়েনি। ততক্ষণে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আর বুঝতে বাকি নেই তিনি প্রতারকের খপ্পরে পড়েছেন।
বিষয়টি নূরজাহান খাতুন জানতে পারলে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করেও কোনো লাভ হয়নি। পাওয়া যায়নি ওই প্রতারককে।
ভুক্তভোগী নূরজাহান খাতুন জানান, ২০ বছর আগে তাঁর স্বামী কফিল উদ্দিন মারা যান। সহায় সম্বল কিছুই নেই। অসুস্থ শরীর নিয়ে অন্যের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে চলেন। প্রতিবন্ধী দুই মেয়ে নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করেন। অন্যের কাছে চেয়ে চিন্তে যা পান তা জমিয়ে রাখেন। এভাবে ৯৩ হাজার টাকা জমিয়েছেন। বাড়িতে নিরাপদ মনে না করে আজ সকালে শাবানা খাতুন নামে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ওই টাকা রাখতে ব্যাংকে যান। এরপর এক ব্যক্তি ব্যাংকে হিসাব খুলে দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংক বড়বাজার শাখার সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার আলমগীর হোসেন জানান, আজ ব্যাংকে এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। নুরজাহান খাতুন নামে ওই নারীর বর্ণনা অনুযায়ী সিসিটিভির ফুটেজ চেক করা হয়েছে। ব্যক্তিটিকে পরিষ্কার চেনা যাচ্ছে না। তবে বিষয়টি কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশকে জানানো হলে পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে।
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেহাবুর রহমান সিহাব জানান, নূরজাহান নামে এক বৃদ্ধা মহিলা ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন মর্মে থানায় এসে একটি অভিযোগ দিয়েছেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা কাজ করছি। ব্যাংক থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। প্রতারককে চিহ্নিত করতে কাজ চলছে।
ভুক্তভোগী ভিক্ষুক নূরজাহান খাতুন কুষ্টিয়া শহরের চালের বর্ডার এলাকায় দুই প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে বসবাস করেন।