মাঠের রাজনীতিতে ‘সতর্ক’ থাকবে বিএনপি
ফ্যাসিবাদী ‘কর্মকাণ্ড’ রুখে দিতে মাঠের রাজনীতিতে ‘সতর্ক’ থাকবে বিএনপি। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে দলের সব অঙ্গসংগঠনকে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার পাশাপাশি মাঠের রাজনীতিতে বিএনপি নেতাকর্মীরা সক্রিয় থাকবে। এই নীতি দলের সবশেষ স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে সরব কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সভা-সমাবেশ গণসংযোগ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন দলের দায়িত্বশীল নেতারা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আমি প্রতিবারই বলছি সামনের পথ মোটেও মসৃণ নয়। বিএনপির বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। জনগণের আস্থা নষ্ট হয় এমন কোনো কাজ করা যাবে না। মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জনে দলের নেতাকর্মীদের এক থাকতে হবে। বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মীকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করে দলের স্থায়ী কমিটির এক নেতা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, নির্বাচনের দাবিতে এখনই বিএনপি কোনো কঠোর কর্মসূচিতে যাবে না। অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপে রেখে নির্বাচনের রোডম্যাড আদায়ের জন্য চেষ্টা করবে বিএনপি। ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য ধরে রেখে মাঠের রাজনীতিতে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখা হবে। সাংগঠনিক গতিশীলতা আরও বাড়ানো হবে।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ছাত্রদল আগামী দিনে যেকোনো ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করতে প্রস্তুত। জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে যে দুই হাজারের বেশি মুক্তিকামী মানুষ শহীদ হয়েছে, তাদের সবাইকে পুলিশ বা সরকারি বাহিনী হত্যা করেনি। নিষিদ্ধঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের ক্যাডাররা প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে অসংখ্য মানুষ খুন করেছে। জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় গণহত্যায় ফ্যাসিস্ট পলাতক খুনি হাসিনার নির্দেশে কসাই-জল্লাদের ভূমিকা পালন করেছে ছাত্রলীগ। গণহত্যার আগেও সারাদেশে বিশ্বজিৎ-আবরার থেকে শুরু করে ছাত্রলীগ যত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, সবগুলো নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন মিলেও এত মানুষ খুন করেনি।’
নাছির উদ্দিন নাছির আরও বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অন্তর্বর্তী সরকার ছাত্রলীগকে নামে মাত্র নিষিদ্ধ করে দায় সেরেছে। ছাত্রলীগের খুনি, সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় আনার কোনো জোরালো তৎপরতা গ্রহণ করেনি। ছাত্রলীগের শীর্ষ কোনো নেতাকে বা সন্ত্রাসী ক্যাডারকে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি। ছাত্রজনতা নিজেরা কয়েকজনকে আইনের হাতে তুলে দিয়েছে। সরকারের এই ব্যর্থতার কারণেই নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করার সাহস পেয়েছে। খুনিদের বিচারের ক্ষেত্রে সরকারের নির্লিপ্ত আচরণের কারণেই তারা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাচ্ছে। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। নিষিদ্ধ সংগঠনের সব কর্মসূচি এবং গোপন তৎপরতা প্রতিহত করার দায়িত্ব সরকারের। নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের হাত থেকে ছাত্র জনতার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বও সরকারের। সরকার তাদের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হলে ছাত্র-জনতা জুলাই আগস্টের মতোই আবারও রাজপথে নেমে ছাত্রলীগকে প্রতিরোধ করবে।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান বলেন, কোনো দল বা সংগঠন ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ড চালালে দেশের মানুষই তাদের রুখে দেবে। অতীতে যাদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ রয়েছে তারা রাস্তায় নামলে দেশের সাধারণ মানুষই প্রতিহত করবে। ফ্যাসিবাদী শাসনে মানুষ বিক্ষুব্ধ। তাই কেউ রাস্তায় নেমে অরাজকতা করলে অবশ্যই তাদের প্রতিহত করা হবে।
জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিএনপি আন্দোলন করেছে। ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হয়ছে। আমাদের যে অর্জন এটা কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। গণতন্ত্রের যে অভিযাত্রা শুরু হয়েছে, এটা অব্যাহত রাখতে হবে। গণতান্ত্রিক শক্তির বহু মত-পথ থাকতে পারে। কিন্তু ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য ধরে রাখতে হবে।