কিশোরগঞ্জে আ.লীগ নেতার জামিনে বিএনপি নেতার তোড়জোড়, নেতা-কর্মীদের ক্ষোভ
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/15/kishoreganj_anwar_hosen_accused_-_2.jpg)
কিশোরগঞ্জে বিএনপি অফিসে গুলিবর্ষণ ও ভাঙচুরের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামি আওয়ামী লীগ নেতার জামিনের জন্য মামলার বাদী ও বিএনপি নেতাদের তৎপরতায় দলের নেতা-কর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষুব্ধ বিএনপির নেতা-কর্মীরা এসব কর্মকাণ্ডে মামলা বাণিজ্যের মাধ্যমে দলের ভাবমূর্তি বিনষ্টসহ পতিত ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনের অভিযোগ তুলেছেন।
মিঠামইন থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা মিঠামইন সদরে বিএনপি অফিসে হামলা চালিয়ে নেতা-কর্মীদের ওপর গুলিবর্ষণ ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটায়। এ সময় তারা শহীদ জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার ছবিসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় ৯ সেপ্টেম্বর মিঠামইন উপজেলা জাতীয়তাবাদী মৎসজীবী দলের সভাপতি লোকমান হোসেন বাদী হয়ে ১৪৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৬০ থেকে ৭০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। লোকমান হোসেনের চাচা জাহিদুল আলম জাহাঙ্গির মিঠামইন উপজেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্বে আছেন।
ওই মামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ভাই ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হক নূরুকে প্রধান আসামি করা হয়। এছাড়া সাবেক রাষ্ট্রপতির ভাতিজা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও মিঠামইন সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরীফ কামাল এবং তার ভাই পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কিশোরগঞ্জ জেলার সাবেক পরিচালক তারেক কামালকেও আসামি করা হয়।
দুই দিন আগে এই মামলার সন্দেহভাজন আসামি হিসাবে মিঠামইন উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং নৌকা প্রতীকে বিজয়ী গোপদীঘি ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করে থানা পুলিশ।
তখন মিঠামইন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিউল আলম জানান, উক্ত মামলার তদন্তকালে ঘটনার সাথে আনোয়ার হোসেনের জড়িত থাকার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
অথচ আনোয়ার হোসেনের গ্রেপ্তারের পরপরই বাদী লোকমান হোসেন নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিট করে জানায়, আনোয়ার হোসেন একজন ভালো মানুষ এবং মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। মামলায় জামিনে মুক্তি বা খালাস পেলে তার কোনো আপত্তি নাই।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে দাখিল করা আনোয়ার হোসেনের জামিন আবেদনেও বাদী লোকমান হোসেন লিখিতভাবে জানান যে, জামিন দিলে তার কোনো আপত্তি নাই। এমনকি আসামি পক্ষের জামিন শুনানিতে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে বিচারক আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এদিকে এমন ঘটনায় ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেছেন মিঠামইন উপজেলা বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।
মিঠামইন উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি রবিউল আলম শ্যামল জানান, টাকার বিনিময়ে মামলা বাণিজ্যের মাধ্যমে দলের মারাত্মক দুর্নাম হচ্ছে। এসব যারা করছে, তারা পতিত আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন চাচ্ছে।
উপজেলা বিএনপির কার্যকরি সদস্য ও গোপদীঘি ইউনয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল হক বাচ্চু বলেন, এটা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, আসামির কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে জামিনে সহযোগিতা করা হচ্ছে। এর ফলে দলের ভাবমূর্তি মারাত্মক ক্ষুন্ণ হয়েছে।
মিঠামইন উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব এরশাদুল হক বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দমন-পীড়ন ও বিএনপি অফিস ভাঙচুরে জড়িত আসামিদের পক্ষে জামিন চাওয়া অত্যন্ত নিন্দনীয়। এ ঘটনা দলের তৃণমুলের কর্মীদের মনোবল নষ্ট করে দিবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান মুহিন বলেন, অসৎ উদ্দেশ্যে মামলা বাণিজ্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং এর বিচার দাবি করছি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মামলার বাদী উপজেলা জাতীয়তাবাদী মৎসজীবী দলের সভাপতি লোকমান হোসেন বলেন, পুলিশ যেটাই সন্দেহ করুক, আমি জানি আনোয়ার হোসেন একজন ভালো মানুষ। তাছাড়া তাকে ঘটনাস্থলে বা আশপাশে আমি যেমন দেখি নাই, অন্য কেউও দেখে নাই। এমনকি তার জড়িত থাকার কথা শোনাও যায়নি। তাই তার জামিনে আপত্তি নেই বলেছি।
আসামি পক্ষে জামিন শুনানিতে অংশ নেওয়া অইনজীবী ও মিঠামইন উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন রুবেল জানান, আসামি জড়িত ছিলেন না জেনেই পেশাগত দায়িত্বের নৈতিকতা বোধ থেকে জামিন শুনানিতে অংশ নিয়েছি।