বিয়ারিং গাড়িই সঙ্গী কাশেমের, ইট ভেঙে চলে সংসার

ঠাকুরগাঁওয়ের শিবগঞ্জ বাজারের পাশে ইট ভাঙছেন মধ্যবয়সী আবুল কাশেম। জন্মের কয়েক মাস পরই অগ্নিকাণ্ডে তার একটি পা পুড়ে যায়। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও থেমে নেই তার জীবনযুদ্ধ। বেয়ারিং গাড়ি ও দুটি হাতের সাহায্য নিয়ে চলছে জীবন-জীবিকা। বিভিন্ন স্থানে ইট ভেঙে চলছে সংসার।
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার পৌর শহরের ভেলাতৈড় এলাকার বাসিন্দা আবুল কাশেম। জন্মের কিছুদিন পরই আগুনে দগ্ধ হয়ে পা হারান তিনি। পা হারানো ছেলেকে দীর্ঘদিন যত্নে বড় করার পর বিয়ে দেয় পরিবার। এরপর থেকে নিজের ও স্ত্রীর কথা ভেবে কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন কাশেম। পঙ্গুত্ব নিয়েই জীবিকার তাগিদে কাজের সন্ধানে বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে বেড়ান। ২০১১ সাল থেকেই ইট ভাঙার কাজে লেগে যান।
কাশেমের পঙ্গুত্বের সঙ্গে তার জীবনযুদ্ধে একমাত্র সঙ্গী বিয়ারিং গাড়ি। প্রতিদিন সকালে এই বিয়ারিং গাড়িতে বসে দুই হাতের সাহায্যে কাজের সন্ধানে ছুটে বেড়ান পুরো শহর। মাঝেমধ্যেই ইট ভাঙার কাজ পান কাশেম। দিন হাজিরা পান ৪০০-৫০০ টাকা। বর্তমানে কাশেমের পরিবারে রয়েছে তার স্ত্রী ও তিন সন্তান। যাদের পড়াশোনাও করাচ্ছেন তিনি।
কাশেমের পরিবারের সদস্যরা বলেন, জন্মের কিছুদিন পরই আগুনে পুড়ে যায় কাশেমের ডান পা। এরপর অর্থের অভাবে সঠিক চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। তবে এই পঙ্গুত্ব হার মানাতে পারেনি কাশেমকে। দীর্ঘ ২২ বছর ধরেই এই পঙ্গুত্বকে শক্তি ভেবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
আজেমা আক্তার নামে স্থানীয় এক নারী বলেন, ‘কাশেমের এই জীবনযুদ্ধ সমাজের কাছে একটি বড় অনুপ্রেরণা। তাকে দেখে আমাদের সমাজের মানুষের শেখা উচিত। অন্যের কাছে না চেয়ে, ভিক্ষা না করে নিজে কর্ম করার মধ্যে শান্তি আছে।’
কাশেমের স্ত্রী বলেন, ‘সরকারি সহযোগিতা পেলে আমরা সংসার ভালোভাবে চালাতে পারতাম। বাচ্চাগুলোকে পড়ালেখা করে মানুষের মতো মানুষ করতে পারতাম।’

জীবন সংগ্রামে হার না মানা আবুল কাশেম বলেন, ‘আমি আগে বাসার আশপাশে মানুষের কাছে চেয়ে খেতাম। একদিন এক চাচা আমাকে বলল, ভিক্ষা করে আর কতদিন খাবি। বাচ্চা-কাচ্চাদের মানুষ করতে হবে না, নিজে ভালো কিছু কর। আমাকে আরো কিছু কটাক্ষ করে কথা বলেছিল সেদিন। ঠিক সেদিন থেকে আমি নিয়ত করেছি আর কখনো কারো কাছে চেয়ে খাব না। সেদিন থেকে আমার এই সংগ্রামের জীবন শুরু। তবে সরকারি সহযোগিতা পেলে আমার কষ্টের অবসান ঘটত।’
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানার সঙ্গে কথা হয়। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘প্রতিবন্ধী হয়েও কাশেম নিজে কর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করছে, এটা প্রশংসার দাবি রাখে। তাকে দেখে আমাদের সমাজের মানুষের শিক্ষা নেওয়া উচিত। আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চেষ্টা করব তার পাশে থাকার।’