স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ে অনশনরত গৃহবধূর আত্মহত্যার চেষ্টা

দুই প্রবাসীর প্রেম। অবশেষে বিয়ে। বিয়ের পরে স্বামীর প্রতারণার শিকার হয়ে স্ত্রীর অধিকার ও শিশু কন্যাকে ফিরে পেতে প্রবাসী স্বামী হাসান সাজীর বাড়িতে দুই সপ্তাহ অনশনে থেকে কোনো সুরাহা না পেয়ে গতকাল বুধবার (১২ মার্চ) রাতে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টার করেছেন মিতু আক্তার নামের এক গৃহবধু। আত্মহত্যা চেষ্টার খবর শুনে স্বামীর পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে রাতেই ভোলার চরফ্যাশন হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।
এর আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে এসে চরফ্যাশনের ওমরপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রবাসী স্বামী হাসান সাজীর বাড়িতে অনশন শুরু করেন গৃহবধূ মিতু আক্তার। ওই নারীর অবস্থান টের পেয়ে ফাঁকা ঘরে গৃহবধূকে রেখে পালিয়ে যান স্বামীসহ তার পরিবারের সদস্যরা।
গৃহবধূ মিতু আক্তার জানান, কয়েক বছর আগে দুই সন্তান নিয়ে তার প্রথম স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে যায়। জীবিকার তাগিদে তিনি সন্তানকে রেখে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। প্রবাসে থাকাকালীন সময়ে ওমান প্রবাসী যুবক হাসান সাজীর সঙ্গে তার এক বান্ধবীর মাধ্যমে ইমোতে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্রে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রণয়ের সূত্রে তারা দুজন বাংলাদেশে ফিরলে ২০২১ সালে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর দুই বছর স্বামী-স্ত্রী দুজনেই ঢাকায় একটি ভাড়া বাসায় থেকে সংসার করেন। এর মধ্যেই তাদের ঘরের জন্ম নেয় একটি কন্যা সন্তান। সংসারের খরচ জোগাতে স্বামী-স্ত্রী দুজনই ফের শিশু কন্যা রোজা আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে সৌদি আরবে পাড়ি জমান এবং দুজনই এক মালিকের কাছে চাকরি নেন।
মিতু আক্তার জানান, কয়েক মাস পর স্বামী কৌশলে তার শিশু কন্যা রোজা আক্তারকে প্রতিবেশী এক ব্যক্তির মাধ্যমে দেশে পাঠিয়ে দেন। স্বামী-স্ত্রী দুজন প্রবাসে থাকাকালীন সময়ে স্বামী হাসান ফের পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। এর মধ্যে স্বামী হাসান তাকে রেখে ছুটি নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। মিতুর আয়ের সব টাকা হাতিয়ে নিয়ে গোপনে বিয়ে করে নতুন করে সংসার শুরু করেন। ছুটি শেষে ফের তিনি সৌদি আরবে ফিরে যান এবং স্ত্রী মিতুর সঙ্গে বিবাদ শুরু করেন। দাম্পত্য বিরোধ দেখে প্রবাসী মালিক তাদেরকে দেশে পাঠিয়ে দেন। পরে ঢাকায় এসে স্বামী হাসান কন্যা সন্তানকে নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। গত তিন মাস যাবৎ তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না করায় তিনি স্বামীর অধিকার ও কন্যা সন্তানকে ফিরে পেতে স্বামীর বাড়িতে অবস্থান নেন।
মিতু আক্তার আরও জানান, স্বামীর বাড়িতে অবস্থান নেওয়ার পরপরই তাকে দেখতে পেয়ে স্বামীসহ শ্বশুর বাড়ির সদস্যরা তাকে ফাঁকা ঘরে রেখে পলিয়ে যান। গত দুই সপ্তাহ তিনি ওই বাড়িতে অবস্থান নিলে স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে গিয়েও থেমে থাকেননি, মাঝে মধ্যে শাশুড়ি রাহিমা বেগম বাড়ি ফিরে এসে তার ওপর চালাতো অমানুষিক নির্যাতন। একদিকে স্বামী-শাশুড়ির নির্যাতন ও নিজের সন্তানকে লুকিয়ে রাখায় তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
অভিযুক্ত স্বামী হাসান সাজী পালিয়ে থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি। তবে অসুস্থ গৃহবধূর সঙ্গে হাসপাতালে থাকা হাসানের মা রহিমা বেগম বলেন, ‘হাসান ও ওই মেয়ে দুজনে বিয়ে করেছে, এসব আমি জানি না। তবে ওই মেয়ে আমার বাড়িতে আসার পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। আমার ছেলে হাসান বাড়িতে নাই অনেক দিন। ওই নারী বাড়িতে আসার পর ছেলে বাড়ি থেকে চলে গেছে। কোথায় আছে তা আমার জানা নাই। ছেলে যদি বিয়ে করে থাকে সেটা ছেলের বিষয়।’
চরফ্যাশন হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. আশরাফুল ইসলাম সুমন জানান, মিতু আক্তার নামের এক রোগী হাসপাতালে আসে। রোগীর শ্বশুর জানায় মিতু ৯টি ঘুমের ওষুধ খেয়েছে। পরে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে চরফ্যাশন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নাই। তবে দ্রুত বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’