জুলাই শহীদ পরিবারে ঈদ উপহার : ফ্যাসিস্টের দোসর থাকায় বিব্রত জামায়াতনেতারা

ময়মনসিংহে জুলাই শহীদ রেদওয়ান আহমেদ সাগরের পরিবারকে ঈদ উপহার তুলে দিতে গিয়ে চরম বিতর্ক ও বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়েছে ময়মনসিংহ মহানগর জামায়াতে ইসলামী। উপহার বিতরণকারী নেতাদের সঙ্গে পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী অধ্যক্ষ মাওলানা ইদ্রিস খানের উপস্থিতির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা।
এ ঘটনায় বিব্রত জামায়াত নেতারা। ঘটনাটি সংগঠনকেই প্রশ্নের মুখে ফেলেছে বলে মতামত জামায়াতের নেতাদের।
ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে :
ঈদুল ফিতরের আগের দিন রাতে শহরের আকুয়া চৌরংগীর মোড়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গুলিতে জুলাই শহীদ রিদওয়ান আহমেদ সাগরের বাসায় যান ময়মনসিংহ মহানগর জামায়াতের আমির কামরুল আহসান এমরুল ও সেক্রেটারি মো. শহীদুল্লাহ কায়সার। তাঁদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের অর্থ সম্পাদক মহসিন ও জামাত নেতা মুজাহিদ। এ সময় সবার নজর কাড়েন অধ্যক্ষ ইদ্রিস খান। তাঁর হাত থেকেই শহীদ পরিবারে ঈদের উপহার হিসেবে নগদ টাকা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী তুলে দেন জামাতনেতারা।
কে এই ইদ্রিস খান?
অধ্যক্ষ ইদ্রিস খান বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং পলাতক সাবেক সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান শান্তর অন্যতম নির্বাচনি প্রচারক ছিলেন। নির্বাচনের পর মোহিত উর রহমান শান্তর সঙ্গে তাঁর নিজের ছবি পত্রিকায় ছাপিয়ে দিয়ে নির্বাচিত হওয়ায় শান্তকে অভিনন্দন জানান। তিনি শান্ত ও তাঁর চাচা শ্বশুর ত্রিশালের পলাতক সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগনেতা হাফেজ রুহুল আমীন মাদানীর প্রভাব খাটিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের সহায়তায় একাধিক মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিকের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ওইসব নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিরা সহায়-সম্পত্তি হারিয়ে পথে বসেছেন। সেই ইদ্রিস খান এখন নিয়মিত কৃষ্টপুর এলাকায় মহানগর জামাতের অফিসে বসে থাকেন। জামায়াত নেতারাও এ কথা স্বীকার করেছেন। তাঁরা জানান, জামাতের একটি বুর্জোয়া অংশের নেতারা ইদ্রিস খানকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন ।

জামায়াতের অন্দরমহলে কী চলছে?
ইদ্রিস খানের মত বিতর্কিত ব্যক্তির সঙ্গে শহীদ পরিবারে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জামায়াতের অন্দর মহলেও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা জানান, জামায়াতের একটি বিশেষ 'বুর্জোয়া গোষ্ঠী ইদ্রিস খানকে দলের মধ্যে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবেই শহীদ পরিবারের বাড়িতে ঈদ উপহার দিতে গিয়ে তাকে সম্মানজনকভাবে সামনে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। এর আগে জামায়াতের শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের একটি অনুষ্ঠানের মঞ্চেও তাকে অতিথির আসনে বসানো হয়েছিল, তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়।
জামায়াতনেতারা বিব্রত :
ময়মনসিংহ মহানগর জামায়াতের আমির কামরুল আহসান এমরুল বলেন, ‘ঘটনার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় আমরাও বিব্রত। কীভাবে ইদ্রিস খান আমাদের কার্যক্রমে এসে গেলেন, সেটি আমাদের জন্যও বিরাট রহস্য। তিনি রাতে মহানগর জামায়াতের অফিসে আসেন এ কথা সত্য। তবে আমরা কেউ তাকে অফিসে আসতে নিষেধ করিনি।’
শহীদ পরিবারের ক্ষোভ :
ঘটনায় মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ শহীদ রেদওয়ানের বাবা মো. আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘আমি ইদ্রিস খানকে চিনি না। কিন্তু জামায়াত নেতারা একজন ফ্যাসিস্টের সহযোগীকে সঙ্গে নিয়ে এসে আমাদের পরিবারকে অপমান করেছেন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ মাওলানা ইদ্রিস খান বলেন, আমাকে জামায়াতনেতরা ডেকে নিয়ে গেছেন। আমার কী দোষ?
বিএনপির প্রতিক্রিয়া
এ বিষয়ে বিএনপির সহসাংগাঠনিক সম্পাদক ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশ গ্রহণকারী কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠন ফ্যাসিস্টদের দোসর ইদ্রিস খানের মতো লোকজনকে আশ্রয় দিবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস ।
২০২৪ সালের ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় ময়মনসিংহের মিন্টু কলেজ এলাকায় ছাত্র-জনতার কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গুলিতে নিহত হন রেদওয়ান আহমেদ সাগর। তার আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই ঈদে শহীদ পরিবারকে উপহার দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু সেখানে জামায়াতের এমন বিতর্কিত পদক্ষেপ শহীদ পরিবারের প্রতি অপমান হিসেবেই দেখছে সাধারণ মানুষ।