একাধিক পদ্ধতিতে প্রবাসীদের ভোটের আওতায় আনতে হতে পারে : ইসি

প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে একাধিক পদ্ধতি অবলম্বন করতে হতে পারে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কশিনার (ইসি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। আজ বুধবার (৯ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, আজকের মধ্যে বিশেজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি অ্যাডভাইজরি টিম গঠন করা হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীদের, যেকোনো পরিসরেই হোক না কেন, ভোটের আওতায় আনতে পারব।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, প্রধান উপদেষ্টা প্রথম তার ভাষণে প্রবাসীদের ভোটের অধিকার দেওয়ার কথা বলেছেন। এজন্য নির্বাচন কমিশনও এই প্রত্যাশা ধারণ করে। আমরা ১৭৮টি দেশে স্টাডি করে দেখেছি, ১১৫টি দেশ তাদের প্রবাসী নাগরিকদের জন্য ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা রেখেছে। সবচেয়ে অনুসৃত পদ্ধতি হচ্ছে দূতাবাসে, এরপর হচ্ছে পোস্টাল ব্যালট, এরপর হচ্ছে অনলাইন বা প্রক্সি ভোটিং। বাংলাদেশের প্রবাসীদের যে বিস্তৃতি তাতে দূতাবাসে সেটা সীমিত। এজন্য তিনটিকে শর্ট লিস্ট করেছি। পোস্টাল ব্যালট, অনলাইন ও প্রক্সি ভোটিং। তিনটিরই কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, কিছু সুবিধাও আছে। কমিশনের কাছে বিষয়টি উত্থাপনের পর নির্বাচন, আইন, কারিগরি ও নির্বাচনি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার কর্মশালা করি। যেখানে ১০টি টিম তাদের উপস্থাপনা উপস্থাপন করেছে। ঢাবি, বুয়েট, এমআইএসটি, সমাজক্যাণ মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিল।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ১০টি উপস্থাপনার মধ্যে তিনটা পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা দেখেছি। আমরা যে পদ্ধতিই অনুসরণ করি না কেন, তা বাংলাদেশের প্রবাসীদের বিস্তৃতসহ অন্যান্য বিষয় বিবেচনা সাপেক্ষে করতে হবে। যে পদ্ধতিতেই করি না কেন, প্রবাসীকে প্রথমে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। ভোট দেওয়ার আগে এই নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। বাংলাদেশের জন্য কোনো একটা পদ্ধতি নয় বরং মিশ্র পদ্ধতি করতে হবে। কেন না একেক দেশের পরিস্থিতি একেক রকম। সকল পদ্ধতির সফলতা ও দুর্বলতা আছে। সকল পদ্ধতির জন্য মক টেস্টের প্রয়োজন হবে। সম্ভবত সকল পদ্ধতিই পরীক্ষামূলকভাবে সীমিত পরিসরে করতে হবে। এটা অনেক দেশ করছে।
এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, অনলাইন ভোট এখনও জনপ্রিয় হতে পারেনি। অনেক দেশ চার-পাঁচ বছর ধরে করছে পাইলটিং। কর্মশালার আলোচনায় ওঠে আসা পদ্ধতিগুলো ফাইন টিউন করতে হবে। আমাদের পরবর্তী কার্যক্রম হচ্ছে, একটা অ্যাডভাইজরি টিম গঠন করব, গতকাল যারা বিশেষজ্ঞ ছিলেন তাদের নিয়ে। তিনটি পদ্ধতির সফলতা, দুর্বলতা পর্যালোচনা করে কি করে দুর্বলতা কাটানো যায়, সে ব্যবস্থা তারা করবেন। এরপর আমরা অংশীজনদের সঙ্গে বসব। আমরা যাই করি না কেন যে সময়টা আমরা পাব তার মধ্যেই কাস্টমাইজ করতে হবে। তাই সময় না পেলে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। এজন্য আমরা একটা দিনও নষ্ট করছি না। ইনশাআল্লাহ এবার প্রবাসীদের ভোটের আওতায় আনতে পারব। তবে কোন পদ্ধতিতে হবে সেটা কারিগরি টিম কাজ করার পর চূড়ান্ত হবে।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ আরও বলেন, যদি সব ভোটারকে আনতে চাই তাহলে প্রক্সি একমাত্র অপশন। প্রক্সি ভোটের দুর্বলতা অনেকে তুলে ধরেছেন। সফলতাও তুলে ধরেছেন। অন্যগুলোর ক্ষেত্রেও তাই। কোনো অপশনকেই আমরা সিঙ্গেল আউট করছি না। বাংলাদেশের জন্য কোনো একটি সিঙ্গেল অপশন অ্যাপ্লিকেবল না। কম্বাইন্ড অপশনের দিকে যেতে হবে। তিনটা পদ্ধতিকে যদি আনা যায়, তাহলে আমরা তিনটা পদ্ধতিকেই আনব। এখন প্রবাসী যে দেশে থেকে ভোট দিতে চান, সেই দেশে ওই পদ্ধতি কার্যকর কিনা সেটা দেখতে হবে। অনলাইন ভোটিংয়ে যেতে হলে সময় আরও বেশি লাগবে।
ইসি সানাউল্লাহ বলেন, পৃথিবীতে ২৫টির মতো দেশে প্রক্সি ভোট করছে। ডিজেবল বা হসপিটালে আছে, গর্ভবতী, শিক্ষার্থী, ফোর্সেসদের জন্য, কারাগারের জন্য, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মসচারি, ভোটের দায়িত্বে নিয়োজিতরা, বিদেশে অবস্থান করা ও ডিপ্লোমেটদের জন্য করছে। তবে কিছু কিছু দেশ সবার জন্য প্রক্সি ভোটের ব্যবস্থা করছে। নেদারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, ইউকে সবার জন্য উন্মুক্ত রেখেছে। আর অন্যরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে রেখেছে। প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে চাইলে সব পদ্ধতিতেই সীমাবদ্ধতা আছে। তবে আমাদের সেই সীমাবদ্ধতা কমিয়ে আনতে হবে।
এক প্রশ্নে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, গতকালের কর্মশালায় কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো প্রভাবিত করিনি। আমরা চেয়েছি সবাই খোলামেলা মতামত দিই। এজন্য আমরা কর্মশালা করেছি। যেন গবেষকরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করে ভালো মন্দ দিক তুলে ধরুক। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রাত জেগে ছাত্রদের নিয়ে কাজ করে উপস্থাপনা দিয়েছে। আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে— যদি বড় পরিসরে অনেক প্রবাসীকে আনতে চাই তবে প্রক্সি হচ্ছে অনলি ওয়ান অপশন। বাস্তবতার নিরিখে আমরা অবস্থান পরিবর্তন করতে হবে। অ্যাডভাইজরি কমিটি কী পরামর্শ দেয় সেটা আগে দেখি। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে তিন স্তরে মক ভোট করা, তারপর নির্বাচন। পৃথিবীর সকল দেশ জাতীয় নির্বাচনে রেখেছে। আমরা আগে জাতীয় নির্বাচন করি। তারপর স্থানীয় নির্বাচনের বিষয়ে বলতে পারব। আমরা এমন পদ্ধতি আনব না, যেখানে প্রবাসীরা হোঁচট খায়। ইনশাআল্লাহ সব টাইমলি হয়ে যাবে।
এ কমিশনার আরও বলেন, সিস্টেম ডেভেলপ না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না, কতদিন সময় লাগবে। তারপর আমরা বলতে পারব। সংস্কার কমিশন পোস্টাল ও অনলাইন পদ্ধতির পরামর্শ দিয়েছেন। তারা ট্রায়াল পর্যন্ত আটটা ধাপের কথা বলেছেন। ট্রায়াল কতদিন চলবে সেটা কারিগরি বিশেষজ্ঞরাই বলতে পারবে।